পরিবেশ সংক্রান্ত একটি সংস্থা আপত্তি প্রত্যাহার করলেও চা বাগান কর্তৃপক্ষ চুপ
বর্তমান | ১১ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: মহানন্দা অভয়ারণ্যের ইকো সেন্সেটিভ জোনের (ইএসজেড) ঘিরে জট কাটাতে আরও একধাপ এগল শিলিগুড়ি। শুক্রবার পুরসভায় এ ব্যাপারে বৈঠক করা হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইএসজেডের খসড়া এলাকা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল দু’টি সংস্থা। যারমধ্যে একটি সংস্থা এদিনের বৈঠকে নিজেদের আপত্তি প্রত্যাহার করেছে। আরএকটি সংস্থা এখনও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি। এ ব্যাপারে ফের ২১ জানুয়ারি পর্যালোচনা বৈঠক হবে।
মেয়র গৌতম দেব বলেন, ইএসজেডের খসড়া এলাকা নিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে রিভিউ মিটিং করা হচ্ছে। এদিনের বৈঠকেও বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে কিছু মতামত নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদী। এ বিষয়ে আবার বৈঠক করা হবে।
শিলিগুড়ি শহরে মহানন্দা অভয়ারণ্যের ইকো সেন্সেটিভ জোন বা সংবেদনশীল অঞ্চল পাঁচ কিমি থেকে কমিয়ে এক কিমি করার দাবি বহুদিনের। এই দাবি মতো কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠায় রাজ্য সরকার। সেই মতো ইএসজেডের এলাকায় এক কিমি করার বিষয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অবস্থায় দু’টি সংস্থা কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ জানায়। যারমধ্যে একটি পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্থা, আরএকটি চা বাগান। এদিন সংশ্লিষ্ট দু’টি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে পুরসভা।
বৈঠকের পর পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের দার্জিলিং জেলার কার্যনির্বাহী সভাপতি গোপাল দে অবশ্য বলেন, মহানন্দা অভয়ারণ্যের সীমানা থেকে পাঁচ কিমি এলাকা পর্যন্ত ইএসজেড হলে শিলিগুড়ি শহরের উন্নয়ন থমকে যাবে। তাই ইএসজেডের খসড়া এলাকা নিয়ে আপত্তি নেই। বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট এলাকার সীমানা নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছি। তবে নকশালবাড়ির কলাবাড়ি সহ কয়েকটি হাতির করিডর এবং গজলডোবার ঝিল ইএসজেডের অধীনে আনার প্রস্তাব দিয়েছি।
বৈঠকে চা বাগান কর্তৃপক্ষ এখনও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেননি। পুরসভা সূত্রে খবর, আগামী ২০ তারিখের মধ্যে বাগান কর্তৃপক্ষ নিজেদের অবস্থান জানাবে বলে বৈঠকে জানিয়েছে। পাশাপাশি চা বাগানের মালিকদের একাংশ বাগানে ইএসজেডের এলাকা এক কিমি থেকে কমিয়ে ৫০০ মিটার করার দাবি তুলেছেন।
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গ তো বটেই রাজ্যের মধ্যে অন্যতম মহানন্দা অভয়ারণ্য। দার্জিলিং জেলায় প্রায় ১৫৮ বর্গ কিমি এলাকা নিয়ে এই অভয়ারণ্য। এখানে শাল, সেগুন, জারুল সহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। এটি তিস্তা ও মহানন্দা নদীর মাঝে অবস্থিত। এর ৬০ ভাগ অংশ পার্বত্যভূমি এবং বাকি অংশ সমতল ভাগে। যা শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন।
কনফেডারেশন অব রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গের প্রাক্তন সম্পাদক নবীন আগরওয়াল বলেন, মহানন্দা অভায়রাণ্যর সীমানা থেকে পাঁচ কিমি পর্যন্ত এলাকায় শহরের ভক্তিনগর চেকপোস্ট, ৪২, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েত, কালকূট মৌজা, উজানু মৌজা, দার্জিলিং মোড়, স্টেট গেস্ট হাউস, মাটিগাড়ার একাংশ রয়েছে। সেটা কমিয়ে এক কিমি করে খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র। তা নিয়ে আপত্তি ওঠায় ইএসজেডের এলাকা চূড়ান্ত হয়নি। যার ফলে বাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন, টি ট্যুরিজম সহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প থমকে রয়েছে।