• ‘স্যার পড়ার বই চাই’, এডিএমের চেম্বারে সটান হাজির নাইনের ছাত্রী
    এই সময় | ১১ জানুয়ারি ২০২৫
  • বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল

    বই চাই বলে স্কুল থেকে সোজা এডিএম (অতিরিক্ত জেলাশাসক) অফিসে হাজির ক্লাস নাইনের এক ছাত্রী। বৃহস্পতিবার বিকেলে তখনও হাতে কিছু কাজ ছিল আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) সঞ্জয় পালের। এক কর্মী তাঁকে জানান, ইউনিফর্ম পরে এক ছাত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এডিএম তাঁকে ডেকে পাঠান।

    চোখে জল নিয়ে সোনিয়া খাতুন নামে ওই ছাত্রী তার সমস্যর ব্যাপারে জানায়। জানায় কী কী বই দরকার সেটাও। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতে প্রয়োজনীয় সব বই ও একটি চকোলেট নিয়ে এডিএমের অফিস থেকে জামুড়িয়ার পরিহারপুরের বাড়িতে ফেরে সেই ছাত্রী।

    সোনিয়ারা তিন বোন। তার দিদি সালমা খাতুন জানান, বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। ঋণ নিয়ে অনেক কষ্ট করে দিদির বিয়ে দিয়েছেন। ইসিএলের একটি পরিত্যক্ত আবাসনে কোনওরকম থাকেন তাঁরা। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে আসানসোল বিবি কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ভালো ফল করেছেন সালমা। এখনও চাকরি পাননি। খুঁজছেন। লেখাপড়ায় খুবই আগ্রহ রয়েছে তাঁর বোন সোনিয়ারও।

    সালমা বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে বোন খুব কান্নাকাটি করছিল। পরে জানতে পারি, বিজ্ঞান ও ইংরেজি গ্রামার সমেত বেশ কিছু বিষয়ের বই লাগবে ওর। দীর্ঘদিন ধরে কাজ না থাকায় সেগুলো কিনে দিতে পারবেন না বলে বাবা ওকে জানিয়েছিলেন। তাই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল সোনিয়া।’

    কিন্তু বইয়ের জন্য কোনও শিক্ষক–শিক্ষিকার কাছে না গিয়ে একেবারে এডিএম দপ্তরে কেন গেল সোনিয়া? সালমা বলেন, ‘আমার একটি স্কলারশিপের ব্যাপারে বেশ কিছুদিন আগে কয়েকবার অতিরিক্ত জেলাশাসকের (শিক্ষা) সঞ্জয় পালের অফিসে গিয়েছিলাম। তিনি সেই স্কলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেটা বোনের মনে ছিল।

    বৃহস্পতিবার স্কুলে যাওয়ার আগে ও বলে গিয়েছিল যে স্কুল শেষে বইয়ের জন্য সোজা সঞ্জয় স্যরের কাছে যাবে। আর সেটা ও করেও দেখাল। বই আর চকলেট নিয়ে বোন যখন হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকছে তখন বাবা–মা, আমরা সকলে খুব খুশি হয়েছি। এমন আধিকারিকরা থাকলে কোনও ছাত্রছাত্রীরই পড়াশোনা কখনও আটকাবে না।’

    সোনিয়ার কথায়, ‘বইপত্র দিয়ে স্যর (এডিএম) জানতে চান, কন্যাশ্রীতে আমার নাম নথিভুক্ত হয়েছে কি না। আগামীদিনে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হলে আমাকে সেটাও জানাতে বলেছেন তিনি।’ বন্ধু হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকতে চান বলে জানালেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) সঞ্জয় পাল।

    তাঁর বক্তব্য, ‘কেউ যদি পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে কোনও সাহায্য চেয়ে থাকে, আমি সব সময়ে তাদের পাশে থাকব। এর মধ্যে বিরাট কৃতিত্ব আছে বলে মনে করি না।’ সোনিয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রণতি সাহা বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। এমন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে এ সব ক্ষেত্রে আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেককেই বইপত্র কিনে দিই।’

  • Link to this news (এই সময়)