স্কুটির চাবির রিং–এর সূত্র ধরে অবশেষে শাস্তি পেল ব্যবসায়ীর নৃশংস হত্যায় যুক্ত দোষীরা!
২০১৮ সালের ১৮ অগস্ট ঝাড়খণ্ডের মিহি জামতাড়া এলাকায় গলার নলি কাটা অবস্থায় উদ্ধার হয় কলকাতার ব্যবসায়ী সইফ খানের মৃতদেহ। আগের দিন, ১৭ অগস্ট নিউ মার্কেট সংলগ্ন রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের বাড়ি থেকে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সইফ। রাতে আর ঘরে ফেরেননি।
পরে তদন্তে জানা যায়, বিয়ারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সইফকে অপহরণ করে গাড়ির ডিকিতে ভরে ভিনরাজ্যে নিয়ে গিয়ে নলি কেটে খুন করা হয় তাকে। সেই ঘটনাতেই প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে, শুক্রবার সাজা ঘোষণা করল জামতাড়া মুখ্য জেলা দায়রা আদালত। দোষী সাব্যস্ত আফতাব আলম ও নজরে আলমকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি আফতাবকে ২০ হাজার ও নজরেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দু’জনেরই আপাতত ঠিকানা হবে ‘জামতাড়া মণ্ডল কারা’।
সইফের হত্যাকারীদের যাবজ্জীবন সাজার খবরে স্বস্তি জানিয়েছেন নিহত ব্যবসায়ীর মা, সালেহা খাতুন। শুক্রবার সালেহার মন্তব্য, ‘বহুত খুশ হু। ইনসাফ মিলা হাম লোগোকো। বেটা কো তো হামনে খো দিয়ে। ফিরভি দোষীকো সাজা হুয়া।’
কী ভাবে দোষী সাব্যস্ত হলো নজরে আর আফতাব?
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০২১–এর ১৮ অগস্ট সইফের দেহ মিলেছিল মিহি জামতাড়া থানা এলাকার একটি খেতে। সেই তদন্তের সূত্রে কলকাতায়, নিউ মার্কেট থানায় আসে মিহি জামতাড়ার সাব ইনস্পেক্টর অরবিন্দ কুমার সিংয়ের নেতৃত্বাধীন বিশেষ টিম। মাত্র তিন দিনেই, ২১ অগস্ট বেনিয়াপুকুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মূল অভিযুক্ত আফতাব আলম ও তার শাগরেদ নজরে আলমকে। কলকাতায় নির্মাণকাজের ব্যবসা ছিল নিহত ব্যবসায়ী সইফের। সেই সুবাদে তাঁর আলাপ হয় আফতাব ও নজরে আলমের সঙ্গে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই দু’জন সইফের থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ধার নিয়ে সেই টাকা ফেরত দেয়নি। তা নিয়েই ঝামেলা চলছিল।
তদন্তে জানা যায়, টাকা ফেরতের টোপ দিয়েই সইফকে সেদিন রাতে ডেকেছিল অভিযুক্তরা। তখনই ঘুমের ওষুধু মেশানো বিয়ার খেতে দেওয়া হয় সইফকে। ব্যবসায়ী বেহুঁশ হয়ে পড়লে একটি গাড়ির ডিকিতে ভরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মিহি জামতাড়ায়। পুলিশ পরের দিন সইফের দেহ পায়, তখনও তাঁর পকেটে স্কুটির চাবি ছিল। কলকাতার শো–রুমের কোড, ফোন নম্বর সেখানে লেখা ছিল। সেই সূত্র ধরে শো–রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিহি জামতাড়া থানা।
শো–রুমের মালিক সইফের পরিবারকে চিনতেন। তিনি নিহতের ছোট ভাই ইমরানকে ফোন করেন। ফলে স্কুটির চাবির সূত্র ধরে তদন্তে সমাধানসূত্র পান তদন্তকারীরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জামতাড়ার তদন্তকারীরা যোগাযোগ করতে সামনে আসে আফতাব–নজরের নামও। এ দিন নিহত সইফের ভাই কাইশ খান বলেন, ‘এত বছর পর দোষীরা যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছে, আমরা পরিবারের সদস্যরা খুশি। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম।’