• মেদিনীপুর মেডিক্যালের ভেন্টিলেশনে নাসরিন, খিদেয় কঁকিয়ে উঠছে তাঁর ৩ দিনের শিশু
    এই সময় | ১১ জানুয়ারি ২০২৫
  • জন্মের পর একবারও মায়ের দুধ খাওয়ার সুযোগ হয়নি একরত্তির। থাকতে থাকতে কেঁদে উঠছে ৩ দিনের খুদে। তার মা নাসরিন খাতুন। অভিযোগ, সিজ়ারের পরে তাঁকে দেওয়া স্যালাইনে সমস্যা ছিল। যার দরুন অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নাসরিন বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। পাঞ্জা লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। খুদের কান্না দেখে চোখে জল পরিবারের। আল্লার কাছে দিন রাত দোয়া করছেন নাসরিনের জন্য।

    মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শুক্রবার ভোর রাতে মৃত্যু হয় এক প্রসূতির। অভিযোগ, সিজ়ারের পরে দেওয়া স্যালাইনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও ৪ প্রসূতি। তাঁদের মধ্যে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে কেশপুরের বছর ২২-এর নাসরিন খাতুনকে। বুধবার রাতে সিজ়ারের মাধ্যমে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এটিই তাঁর প্রথম সন্তান। স্বাভাবিকভাবেই মেয়ের মুখ দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল পরিবার।

     কিন্তু সেই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হলো না। বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। তড়িঘড়ি তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হয়। শনিবারও নাসরিন ভেন্টেলেশনে। নাসরিনের শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল বলে জানান কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ তথা স্যালাইন সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য সরোজ মণ্ডল। 

    এ দিকে নাসরিনের ৩ দিনের শিশুকন্যাকে নিয়ে ‘অথৈ জলে’ পড়েছে পরিবার। মায়ের দুধও জোটেনি একরত্তির কপালে। নাসরিনের পরিবারকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন এক প্রতিবেশী। নাসরিনের আত্মীয় ইনসান আলি বলেন, ‘শিশুকে আমরা কেশপুরে নিয়ে গিয়েছি। বাড়ির পাশে এক মহিলার ২ মাসের শিশু সন্তান রয়েছে। তিনিই ওই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। তবে মাকে না পেয়ে থেকে থেকে কেঁদে উঠছে সে।’ ধরা গলায় ইনসান বলেন, ‘আশা করছি খুব শীঘ্রই ও নিজের মায়ের কোল পাবে।’

    প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় শিলিগুড়ির ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার তৈরি রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইনের বিরূপ প্রতিক্রিয়াই দায়ী বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। গত ১০ ডিসেম্বর ড্রাগ কন্ট্রোল থেকে ওই সংস্থাকে উৎপাদন এবং সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। তারপরেও ওই সংস্থার ইতিমধ্যেই সরবরাহ হওয়া এবং হাসপাতালে মজুত আরএল ব্যবহার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার তদন্তে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এবং ড্রাগ কন্ট্রোল থেকে ২টি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছয়। 

    জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি ৪ জন প্রসূতির মধ্যে শুধুমাত্র নাসরিনকেই ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। অন্যান্যদের অবস্থা স্থিতিশীল বলেই হাসপাতাল সূত্রে খবর।

  • Link to this news (এই সময়)