এই সময়, বারাসত: জাল নথি তৈরি চক্রের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করল বারাসত থানার পুলিশ। ধৃতের নাম দিবাকর বিশ্বাস। বুধবার এই চক্রে ধৃত সমীর দাসকে জেরা করেই দিবাকরের নাম জানতে পারে পুলিশ। এর পরেই বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে খড়দহের রহড়া থেকে দিবাকরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এই নিয়ে জাল নথি তৈরি চক্রের চারজনকে বারাসত থেকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। শুক্রবার ধৃতকে বারাসত আদালতে তোলা হলে তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এ দেশে বসবাসের জন্য জাল নথি ব্যবহার করে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দিত দিবাকর বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
মূলত ভোটার, প্যান কার্ড ও বার্থ সার্টিফিকেট বানিয়ে দিত সে। বৃহস্পতিবারই বারাসতের রামকৃষ্ণপল্লির খেজুরতলা থেকে কৌশিক মণ্ডল এবং চন্দন চক্রবর্তী নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাল পরিচয়পত্র তৈরির এই চক্রের মূল মাথা এখনও অধরা। জানা গিয়েছে, তার বাড়িও বারাসতে। ধৃতদের জেরা করে সেই মূল মাথাকেই গ্রেপ্তার করতে চাইছেন বারাসত পুলিশ জেলার কর্তারা।
মেডিক্যাল ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিক এবং অনুপ্রবেশকারীদের এ দেশে বসবাসের জন্য জাল নথি তৈরি চক্রের তদন্ত চালিয়ে বুধবারই বারাসতের নবপল্লি থেকে সমীর দাসকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ বার তাঁর এক সহযোগীও ধরা পড়ল পুলিশের জালে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, সমীর এবং দিবাকরের বাড়ি ছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রামের একই এলাকায়। ফলে দু’জনেই পরস্পরের পরিচিত। দিবাকর এদেশে চলে আসে ১৯৮৬ সালে। বাংলাদেশে দিবাকরের বহু পরিচিত এবং আত্মীয়স্বজন রয়েছে। ধৃত সমীরেরও বাংলাদেশের লোকজনদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রয়েছে।
দিবাকর এ দেশে এসে অশোকনগরে থাকতে শুরু করে। ল ক্লার্কের লাইসেন্স বানিয়ে দিবাকর বারাসত আদালতে কাজ করত বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। পরে রহড়ায় একটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকছিল সে। চিকিৎসার জন্য এ দেশে আসার পর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকরাই ছিল সমীর ও দিবাকরের ক্লায়েন্ট। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের যোগাযোগ ছিল। তাদের ভারতে থাকার ব্যবস্থা করত সমীর।
সমীরই বাংলাদেশির জন্য জাল নথি, ভুয়ো ঠিকানা ব্যবহার করে এ দেশের আধার কার্ড তৈরির জন্য পাঠাত কৌশিকের সাইবার ক্যাফেতে। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এ দেশের ভোটার এবং প্যান কার্ড করানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট ঠিকানার প্রয়োজন। সমীরের আত্মীয়ের বাড়ির ঠিকানাগুলিকে লাইসেন্স প্রাপ্ত ল ক্লার্ক হিসেবে দিবাকর খুব সহজেই বারাসত কোর্ট থেকে এফিডেভিট করিয়ে দিত। সমীরকে জেরা করেই দিবাকরের রহড়ার ফ্ল্যাটে হানা দেয় বারাসত থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে কয়েক ঘণ্টা জেরায় বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়ার পরেই শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া বলেন, ‘ধৃত সমীর দাসের কাছ থেকেই দিবাকরের নাম জানা গিয়েছে। জাল নথি তৈরি সংক্রান্ত বিষয়ে সমীরের সঙ্গে দিবাকরের ফোন চ্যাটও পাওয়া গিয়েছে। ধৃতের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সমীর এবং দিবাকরকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে জাল নথি তৈরি চক্রে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’