কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ করা টাকা আর নিজেদের ইচ্ছামতো খরচ করতে পারবে না রাজ্য। সেন্ট্রাল স্পনসর্ড স্কিমে আগে থেকে টাকা পাঠানোও বন্ধ করে দিচ্ছে দিল্লি। যখন যেমন প্রয়োজন হবে, সেই মতো টাকা দেবে কেন্দ্র। যখন কোনও বেনিফিশিয়ারিকে টাকা দেওয়ার প্রয়োজন হবে শুধুমাত্র তখনই টাকা দেবে কেন্দ্র। সে জন্যে ‘জাস্ট ইন টাইম’ নামে নতুন একটি পরিষেবা চালু করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। এর ফলে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে আর সরানোও সম্ভব হবে না।
নবান্ন সূত্রের খবর, কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে সম্প্রতি এ রাজ্যেও এই নতুন অনলাইন নজরদারি ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’–এর মধ্যেও বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা খরচে রাজ্য এতদিন যে স্বাধীনতা পেত, তা আর থাকবে না। সরাসরি নজরদারি চালাবে কেন্দ্র।
রাজ্য অর্থ দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা যাতে অন্য খাতে ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এই নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে কেন্দ্র এবং রাজ্য কোন সময়ে কত টাকা দিচ্ছে এবং সেখান থেকে কত টাকা খরচ হচ্ছে—তার নিখুঁত হিসাব পেয়ে যাবে কেন্দ্র। নতুন ব্যবস্থায় প্রতিটি কেন্দ্রীয় স্কিমের জন্যে রাজ্য সরকারকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে একটি করে ড্রয়িং অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
অধিকাংশ কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দিল্লির পাশাপাশি রাজ্য সরকারকেও খরচের ভার বহন করতে হয়। কোথাও ৫০–৫০, কোথাও তা ৬০–৪০ অনুপাতে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে ড্রয়িং অ্যাকাউন্ট খোলার আগে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার প্রকল্পের শর্ত মেনে অর্থ বরাদ্দ করেছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে রাজ্য সরকার কোন সময়ে কত টাকা তুলতে পারবে, সেটাও ঠিক করে দেবে কেন্দ্র। টাকা খরচের ঊর্ধ্বসীমাও বেঁধে দেবে দিল্লি।
কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা সরকারি এজেন্সিগুলিকে বাধ্যতামূলক ভাবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’–এ নাম নথিভুক্ত করতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রীয় স্কিমের জন্যে একজন করে ‘স্কিম ম্যানেজার’ নিযুক্ত করতে হবে। রাজ্য সরকার চাইলে যে কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাড়তি টাকা খরচ করতে পারে। তবে সেটাকে আলাদা হেড বা তহবিলে রাখতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী–পরিচালিত রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা যথাযথ ভাবে খরচ হচ্ছে না বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন বিজেপি নেতারা। এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে দফায় দফায় চিঠি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই অভিযোগকে কার্যত মান্যতা দিয়ে এ বার কেন্দ্রীয় স্কিমে টাকা কী ভাবে খরচ হবে, তার উপরে সরাসরি নজরদারি চালু করল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের বার বার পুরস্কৃতও করেছে। আমাদের উন্নত ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বহুবার প্রশংসিত হয়েছে। যদি আমাদের স্বচ্ছতা না থাকত তা হলে কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের পুরস্কৃত করল কী ভাবে?’