• শীতের রাতে কনকনে ঠান্ডা জল সাঁতরে ভাগীরথী পার, বাজি হিসেবে জিতলেন স্মার্টফোন
    বর্তমান | ১২ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: শীতের রাত। কনকনে ঠান্ডা জল। খালি গায়ে সেই জল সাঁতরে পার হতে হবে ভাগীরথী। বাজি ছিল এটাই। শীতের রাতে মোটা শোয়েটার, কোর্ট চাপিয়ে বাইরে বেরনোটাই যেখানে কষ্টের, সেখানে এই চ্যালেঞ্জ টাফ বইকি। কিন্তু, কষ্ট করলে যদি ‘কেষ্ট’ মেলে তাহলে চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? এখানে বাজির পুরস্কার ছিল তিন তিন খানা স্মার্টফোন। বন্ধুদের সঙ্গে ধরা সেই বাজি জিতে রাতারাতি ‘হিরো’ বনে গিয়েছেন সাগরদিঘির আনিকুল। শুক্রবার রাতে কনকনে ঠান্ডা জলে সাঁতরে তিনি ভাগীরথী পার করেন। তারপরই চর্চার কেন্দ্রে আনিকুল। তবে তাঁর কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা। যুবকের মায়ের আর্তি, আমার ছেলে ফিরে এসেছে এটাই অনেক। মোবাইলের লোভে বা কোনকিছুর জন্য আর কেউ যেন এমনটা না করে। যদিও বাজিতে মোবাইল জিতে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত আনিকুল।


    সাগরদিঘির বিডিও সঞ্চয় শিকদার বলেন, এনিয়ে আমার বলার কিছু নেই। বিপদ ও ঘটতে পারত। সকলকে সাবধানে ও সতর্ক থাকতে বলব। 


    সাগরদিঘির কাবিলপুর পঞ্চায়েতের তেঘরী কয়ালপাড়ার যুবক আনিকুলের সঙ্গে তাঁর তিন বন্ধুর বাজি হয়। রাতে সাঁতরে ভাগীরথী পার হতে পারলে তিন বন্ধুই তাদের মোবাইল দিয়ে দেবে। না পারলে ছ’টি মোবাইল দিতে হবে। বন্ধুদের সেই বাজিতে রাজি হয়ে যায় আনিকুল। তখন রাত প্রায় ৯টা বাজে। শীতের পোশাক খুলে ফেলে নদীতে ঝাঁপ দেন যুবক। শীতের রাত, তারপর কুয়াশায় ঢেকে যায় এলাকা। বাজি ধরার খবর জানতে পেরে তখন কয়েকজন উৎসুক জনতা নদীর পাড়ে ভিড় জমান। কিছুটা দূর এগতেই কুয়াশায় আর কিছু দেখা যায়নি। বেশ কয়েক মিটার চওড়া নদী। মিনিট ১৫ পরই যুবক নদীর ওপারে উঠে চিৎকার করে বন্ধুদের খবর দেন, জিতে গিয়েছি। সেই খবর ততক্ষণে যুবকের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে। পরিবারের লোকজন উৎকণ্ঠায় নদী পাড়ে এসে দেখেন ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছে আনিকুল। ঘটনাটি জানাজানি হতেই যুবককে দেখতে তার বাড়ির সামনে ভিড় জমে যায়।


    বাজি মতোই স্থানীয় বাসিন্দাদের সামনেই দুই বন্ধু তাঁদের প্রায় ৩০ হাজার টাকার দামের দু’টি স্মার্টফোন আনিকুলের হাতে তুলে দেন। অপর আর এক বন্ধু মোবাইল পরে দেবে বলে জানিয়েছে। চাদরে ঢেকে আনিকুলকে তড়িঘড়ি ঘরে নিয়ে আসা হয়। তারপর আগুন ধরিয়ে তাঁকে গরম করা হয়। ঘরে আগুনে শরীর গরম করতে করতে আনিকুল বলেন, একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। বন্ধুরা বলে নদী পার হতে পারবি না। পারলে তিনটি মোবাইলই দিয়ে দেব। বন্ধুদের সঙ্গে জেদাজেদি করেই শর্তে রাজি হয়ে যাই। নদীতে নামতে আমার ভয় করেনি। তবে উদ্বিগ্ন যুবকের মা সুন্দরী বিবি বলেন, ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে খুবই চিন্তিত। আমি জানতে পারলে লাখ টাকা দিলেও নদীতে নামতে দিতাম না।
  • Link to this news (বর্তমান)