অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: খোঁজ নিলে দেখা যায়, বর্তমানে অধিকাংশ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পিছনে থাকে বিতর্কিত কোনও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট। বহু ক্ষেত্রে পোস্টাদাতা নাবালক। তার ‘অবুঝ’ পোস্টের ফুলকি থেকে লেগে যায় দাবানল। তখন সবার আগে কোপ পড়ে এলাকার ইন্টারনেট সংযোগে। কিছুটা রাশ পড়ে উস্কানিতে। কিন্তু সমস্যাও হয় অনেক। বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণার চাষ আরও বেড়েছে। এই আবহে রাজ্যের স্কুলপাঠ্যে যুক্ত হল সাইবার অপরাধ এবং সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে সচেতনতার পাঠ। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা বিষয়ের অংশ হিসেবে এগুলি পড়বে। সিলেবাস প্রণেতাদের আশা, এর ফলে তারা আরও দায়িত্বশীলভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারবে। সাইবার অপরাধীদের শিকার হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পাবে তারা। এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই পাঠ নেবে ছাত্রছাত্রীরা।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় পড়ুয়াদের বয়ঃসন্ধিকালের শুরু বলা যায়। এই সময় যৌনতা নিয়ে তাদের কৌতূহল অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেই কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। নিজের গোপনাঙ্গের ছবি তোলা বা কাউকে তুলতে দেওয়া, অন্য কারও এরকম ছবি তুলে ফোনে রেখে দেওয়ার মতো কাজগুলির বিপদ বোঝানো হয়েছে পড়ুয়াদের। বলা হয়েছে, এসব করলে ভবিষ্যতে তারা ব্ল্যাকমেইলিং, সম্মানহানিকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। সাইবার নিরাপত্তার প্রাথমিক পাঠও মিলবে। বলা হয়েছে, সংখ্যা এবং বর্ণ নিয়ে পাসওয়ার্ড ন্যূনতম ১০টি সংখ্যার হতে হবে। নিজের স্মার্টফোন বা ট্যাব চট করে কারও হাতে দেওয়া যাবে না। বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য পৃথক পাসওয়ার্ড, একই পাসওয়ার্ড বারবার না ব্যবহার করাই ভালো। স্প্যাম মেইল, ফিসিং মেইল থেকে বাঁচার নানা উপায় বাতলানো হয়েছে।
পড়ুয়ারা যাতে দাঙ্গার কারণ বা উন্মত্ত জনতার অংশ না হয়ে ওঠে, তার জন্য রয়েছে ১২ দফা নির্দেশ। সেখানে বলা হয়েছে, ধর্ম, সম্প্রদায়, ভাষা বা সংস্কৃতি নিয়ে কোনও উত্তেজনামূলক বা বিরূপ পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে, এমন পোস্টে লাইক দেওয়া বা শেয়ার করা যাবে না। কোনও পোস্টকে কেন্দ্র করে জমায়েত, অবরোধ বা মিছিলে অংশ নিতে বারণ করা হয়েছে পড়ুয়াদের। সিলেবাস প্রণয়নের সঙ্গে
যুক্ত শিক্ষক দ্বীপেন বসু বলেন, ‘কোভিডের সময় যখন অনলাইন ক্লাস চলছিল, তখনই এই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবা হয়েছিল। তবে এই সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ।’ কিন্তু এরকম একটি বিষয় কেন স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হল? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সামাজিক মাধ্যমের
কুপ্রভাব বিস্তর। পড়ুয়াদের শরীর এবং মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত।