• রোখার পথ সকলেই জানে, তবু দুর্ঘটনা ঘটেই যায়
    এই সময় | ১২ জানুয়ারি ২০২৫
  • এর শেষ কোথায় এবং কবে, কেউ জানে না। কারণ সমস্যার বয়স অনেক। এই দীর্ঘ সময়ে আলোচনা হয়েছে বহুবার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাগে আনা যায়নি বেপরোয়া প্রাইভেট বাসকে। রোখা যায়নি বেসরকারি বাসের গতির লড়াই। কিন্তু কেন বন্ধ করা যায়নি? অনেকেই মনে করেন, বন্ধ করা যায়নি কারণ যাদের বন্ধ করার কথা তাঁরা তা করেননি। আসলে সমস্যাটা সকলেরই চেনা। এক একটা দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণ যায়। তার পরে খানিক হইচই হয়, নিয়মের কড়াকড়ি হয়, দিনকয়েক যেতে না যেতে আবার যে কে সেই।

    দীর্ঘদিনের অভিযোগ অতিরিক্ত যাত্রী তোলার লোভে বেসরকারি বাসগুলি বিশেষ বিশেষ স্টপেজে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। যেমন ধর্মতলায় লেনিন সরণীর স্টপেজে এক একটি বাস গড়ে ১০ মিনিয় পর্যন্ত অপেক্ষা করে। তার মধ্যে পরের বাস এসে গেলে সেটি আগের বাসকে তাড়া করে। শুরু হয় গতির লড়াই।

    দিনের ব্যস্ত সময়ে আগে এই স্টপেজে ট্রাফিক পুলিশের দেখা মিলত। বর্তমানে তা–ও উধাও। গতির লড়াইয়ে পরের বাস এগিয়ে গেলে প্রথম বাসটি তখন লেট লতিফ। সে গিয়ে ফের দাঁড়াবে চাঁদনি চকে। আর দ্বিতীয় বাসটি ততক্ষণে শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রী তুলতে দাঁড়িয়েই থাকবে। প্রথম বাসটি শিয়ালদহ পৌঁছলে শুরু হবে আবার গতির লড়াই। পরের পথটুকু চলবে রেষারেষি। এই রেষারেষির জেরে দুর্ঘটনা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব ক্ষেত্রেই হয়তো বড় ঘটনা ঘটে না। কিন্তু খুচরো দু্র্ঘটনা রোজই ঘটছে।

    যাত্রীদের প্রশ্ন এই বিশেষ জায়গাগুলিতে কেন পুলিশ থাকবে না? এনআরএস হাসপাতালের সামনের রাস্তা অতি ব্যস্ত এবং সংকীর্ণ বলে সেখানে সিভিক ভলান্টিয়ার সব সময় থাকে। তার ফলে কোনও বাসকেই সেখানে কয়েক সেকেন্ডের বেশি দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। তা হলে ধর্মতলা-শিয়ালদহ, এক্সাইড মোড়, রবীন্দ্রভবন, সিআইটি মোড়-সহ ব্যস্ত স্টপেজগুলিতে কেন পুলিশ তৎপর হবে না? এখানে বাসগুলিকে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে না দিলেই রেষারেষি অনেকটাই এড়ানো যাবে বলে মত নিত্যযাত্রীদের।

    এই অভিযোগ বাসের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাস মালিকদেরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাঁদের বক্তব্য আগে সমস্ত রুট ধরে সমীক্ষা হতো। কোন রুটে যাত্রীর চাপ কেমন, কোন সময়ে যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকে— সব দেখে সেই অনুযায়ী নতুন বাসগুলিকে রুট পারমিট দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সমীক্ষা ছাড়াই বাসের পারমিট দেওয়া হচ্ছে। তার ফলে একই রুটে বাসের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। সেই কারণেও বাসের রেষারেষি বাড়ছে বলে মত বাস মালিকদের। সারা বাংলা বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা পরিবহণ দপ্তরকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি, যাতে যথাযথ সমীক্ষার পরে রুট পারমিট দেওয়া হয়।’

    বাসগুলি যাতে সময়ে চলে, তার জন্য দীর্ঘদিন আগেই জরিমানা চালু হয়েছে। কোনও বাস মূল স্ট্যান্ড থেকে বেরোনোর পরে তাঁকে স্টার্টার একটি চিরকুটে টাইম লিখে দেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁক গন্তব্যে পৌঁছতেই হয়। তা না–হলে রুট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বাসকে প্রতি মিনিটের জন্য ১০ টাকা ফাইন দিতে হয়। ৩০ মিনিটের বেশি হলেই জরিমানা চারশো টাকা। পরের বাস যদি আগের বাসের আগে গন্তব্যে পৌঁছয়, তা হলে ওই প্রথম বাসের জরিমানার টাকা পরের বাস পায়। তা ছাড়া প্রথম বাসটিকে একটি ট্রিপ বসিয়ে দেওয়া হয়। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, যাত্রী তোলার জন্য দেরি করে শেষ বেলায় জরিমানা এড়াতে বেপরোয়া গতিতে বাস ছোটান চালকরা। তাতেও বাড়ে দুর্ঘটনা।

  • Link to this news (এই সময়)