পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার
মার্চের শেষ, উপত্যকা জুড়ে রঙের বাহার। লাল, হলুদ, নীল, সবুজ টিউলিপের মাঝে হারিয়ে যাওয়া। এই চেনা ছবিটা কাশ্মীররে। তবে অতদূর যেতে হবে না। কারণ ফুলে ফুলে সেজে উঠছে অসম–বাংলা সীমানার প্রত্যন্ত এক আদিবাসী জনপদ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ঘন জঙ্গল ঘেরা বারোবিশা। তার পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে জোড়াই নদী। গা ঘেঁষে রয়েছে বন দপ্তরের বহু স্মৃতি বিজড়িত কাঠের শীল বাংলো। তারই মধ্যে ফুলে ফুলে সেজেছে বনগ্রাম। যেখানে ঢুকলেই চোখ টেনে নেবে বেগনিয়া ভেনুস্তা আর গার্লিক ভাইনের কমলা–বেগুনি বাগান। সম্প্রতি এই গ্রামকে ‘ফ্লাওয়ার ভিলেজ’ হিসেবে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সংগঠনের সভাপতি শিলা দাস সরকার বলেন, ‘জঙ্গল ঘেরা এই গ্রাম তার ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে যাতে জেলার পর্যটন মানচিত্রে পাকা জায়গা করে নিতে পারে, তারই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।’ সঙ্গে রয়েছে পর্যটনের সম্ভাবনাও। শীল বাংলো সংলগ্ন এই গ্রাম ‘ফ্লাওয়ার ভিলেজ’ হিসেবে গড়ে উঠলে, দু’য়ের মেলবন্ধনে এলাকায় পর্যটনে বিকাশ ঘটবে। এমনটাই মনে করছেন তাঁরা। উদ্যোগে শামিল হয়েছেন স্থানীয় লোকজনও। তাঁদেরও একঘেয়ে সাদা–কালো জীবনে রঙের ছোঁয়া লেগেছে।
কেন এই উদ্যোগ? স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জঙ্গলের ভিতরে থাকা এই গ্রামে বুনো হাতির উৎপাত লেগেই থাকে বছরভর। ফসল ঘরে তোলার আগে মাঠেই তা সাবাড় করে দেয় হাতির দল। ফলে ৫০টির মতো পরিবার ক্রমশ অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়তে শুরু করে। তাই ফুল–চাষের পরিকল্পনা। একই সঙ্গে নতুন করে বাঁচার স্বপ্নও দেখছেন গ্রামবাসীরা।
গ্রামে ঢোকার মুখে তৈরি হয়েছে বাঁশ ও লোহার তোরণ। তার দু’পাশে লাগানো হয়েছে গার্লিক ভাইন ও বেগনিয়া ভেনুস্তা। এ ছাড়াও পথের দু’পাশে লাগানো হয়েছে বহু প্রজাতির ফুলের গাছ। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেও নানা প্রজাতির ফুলের চারা বড় করে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাড়ির সামনে তৈরি হবে ফুলের গেট। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রঙে রঙে ভরে উঠবে চারিদিক।
ফুল চাষের পাশাপাশি সেখানে পরবর্তীতে হোম-স্টে গড়ে উঠলে বিকল্প উপার্জনের পথ খুঁজে পাবেন এলাকার মানুষজন। তা ছাড়া তাঁদের খাদ্য, সংস্কৃতি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ মিলবে। গ্রামের এক তরুণ সঞ্জয় ভগতের কথায়, ‘আমাদের গ্রাম ঘিরে এই পরিকল্পনা খুবই পছন্দ হয়েছে। আমরা ওই সংগঠনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ শুরু করেছি।’ পর্যটকরাও ফ্লাওয়ার ভিলেজে এসে আনন্দ পাবেন, এই আশায় জোরদার প্রস্তুতি চলছে গ্রামজুড়ে।