এই সময়, কালনা: বানানো হয়ে গিয়েছিল ভোটার কার্ড, আধার কার্ড। কিন্তু কাল হলো বাংলাদেশে থাকা বাবা, মাকে দেখতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে। আর সেটা করতে গিয়েই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলেন পবিত্র মণ্ডল। পুলিশ ভেরিফিকেশনে নথি পরীক্ষার সময় দেখা যায় তাঁর জমা দেওয়া জন্ম সার্টিফিকেট জাল। এর পরই কালনা থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে কালনার কৃষ্ণদেবপুর রায়পাড়ার বাসিন্দা পবিত্রকে। তাঁকে জন্ম সার্টিফিকেট তৈরিতে সাহায্য করা কালনার উত্তর গোয়ারা মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা আজারুল ইসলাম নামে আর এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ধৃত দু’জনের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
কালনার এসডিপিও রাকেশ চৌধুরী বলেন, ‘পাসপোর্টের আবেদনকারী এক জনের বার্থ সার্টিফিকেট জাল মেলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে তা তৈরিতে সাহায্য করা আরও এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে কতটা হেল্প করেছে, কী কী মোডে হেল্প করেছে সব তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, জাল কতটা বিস্তৃত তাও দেখা হচ্ছে।’
জানা গিয়েছে, কৃষ্ণদেবপুরের ভোটার পবিত্র ভোটও দিয়েছেন। পবিত্রর দাবি, বছর তিনেক আগে দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকেছেন তিনি। এ দেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই রয়েছে তাঁর। প্রশ্ন উঠেছে কী ভাবে পবিত্র বানিয়ে ফেললেন ভোটার ও আধার কার্ড? পবিত্রর দাবি, বাংলাদেশের মাদারিপুরের বাসিন্দা তিনি। সেখানে বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।
বছর তিনেক আগে চিকিৎসার জন্য যশোর হয়ে দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢোকেন। কৃষ্ণদেবপুরের বাসিন্দা মামা বিনয় সাধুর কাছেই থাকতেন তিনি। কিছু দিন রাজস্থানে সোনার কাজও করেছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার পরিবেশে বাবা, মাকে এ দেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। তার জন্যই গত ডিসেম্বরে পাসপোর্ট তৈরির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন।
তবে বছর দুয়েক আগে আজারুলের মাধ্যমে জন্ম সার্টিফিকেট জোগাড় করে ফেলেছিলেন তিনি। আজারুলের আবার দাবি, কালনার এক সাইবার ক্যাফে ব্যবসায়ীর মাধ্যমেই সেই জন্ম সার্টিফিকেট তিনি করিয়েছিলেন। ওই সাইবার ক্যাফে ব্যবসায়ী তাঁকে জানিয়েছিলেন, কালনা পুরসভায় তাঁর যাতায়াত আছে। সেখান থেকে তিনি জন্ম সার্টিফিকেট করে দেবেন।
আজারুলের বক্তব্য, জন্ম সার্টিফিকেটর জন্য পবিত্র তাঁর নিজের সঙ্গে বাবা–মায়েরও আধার কার্ড সমেত প্রয়োজনীয় নথি দিয়েছিলেন। জন্ম সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গেলে পবিত্রকে সেটা দিয়ে দেন আজারুল। এ দিকে, মাস কয়েক আগে ওই সাইবার ক্যাফে ব্যবসায়ীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে।
তবে পবিত্র যাঁকে নিজের মামা বলে দাবি করেছেন শনিবার কৃষ্ণদেবপুরের সেই বিনয় সাধু বলেন, ‘পবিত্র আমার দূর সম্পর্কের ভাগ্নে।’ বছর তিনেক এ দেশে এসেছে বলে পবিত্র জানালেও বিনয় বলেন, ‘ও আট বছর ধরে এ দেশে রয়েছে। আমার কাছেই থাকত। এখানে ভোটও দিয়েছে। পবিত্রর বাবা, মাকেও চিনি না।’ পুলিশের কাছে পবিত্র বাবার নাম বলেছেন কালীপদ মণ্ডল। এ নামে কাউকে তিনি চেনেন না বলে জানান বিনয়। তিনি বলেন, ‘কারও বিষয়ে সঠিক না জেনে থাকতে দেওয়াটা আমার ভুল হয়েছে।’
এ দিকে, যে সময়ে ওই জন্ম শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে (২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর) তখন কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান পদে ছিলেন দেবপ্রসাদ বাগ। এ দিন কালনার বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক দেবপ্রসাদ বলেন, ‘সার্টিফিকেটটা দেখেছি। যখন ডিজিটাল সিগনেচার চালু হয়নি তখন অরিজিনাল সিগনেচার করা হতো। এটা ফটোকপি সিগনেচার দেখলেই বোঝা যাবে। অরিজিনাল সিগনেচার নয়।’ কালনা পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত বলেন, ‘আমরা জানিয়ে দিয়েছি, এটা কালনা পুরসভা থেকে ইস্যু হয়নি। কেউ জালিয়াতি করলে আমাদের কিছু করার নেই। পুরসভার ভিতর থেকে এটা করা সম্ভব নয়।’