এই সময়, মেদিনীপুর: এক ইঞ্জেকশনেই ডান হাতের সক্রিয়তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে যুবতীর। চিকিৎসায় গাফিলতির এমনই অভিযোগ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ব্রেস্ট টিউমার অস্ত্রোপচারের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার চন্দ্রকোণা রোড এলাকার বছর চব্বিশের অনুপমা পাল।
সেখানেই ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ায় নষ্ট হয়ে যায় তাঁর ডান হাত। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর, স্বাস্থ্য ভবন, দিদিকে বলো–য় জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার কলকাতা থেকে স্বাস্থ্য দপ্তরের তদন্ত দল আসছে শুনে এ দিন চন্দ্রকোণা রোড থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চলে আসেন অনুপমা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। যদিও এদিন তাঁরা তদন্তকারী দলের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তবে অনুপমাকে আইনি লড়াইয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বাম ছাত্র-যুব নেতৃত্ব।
জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের ৪ জুলাইয়ে ব্রেস্ট টিউমার অস্ত্রোপচারের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন অনুপমা। ৬ জুলাই তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের পর ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাঁকে। এরপর ডান হাতের বাহুতে একটা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এর পরেই তাঁর হাতের অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। অনুপমা জানান, যন্ত্রণায় প্রচণ্ড চিৎকার করছিলেন তিনি।
তখন কর্তব্যরত নার্সেরা চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁর যন্ত্রণা কমাতে স্যালাইনের চ্যানেলে প্রথমে একটা ইঞ্জেকশন দেন। তারপর হাতের বাহুতে আর একটা ইঞ্জেকশন দেন। এরপর যন্ত্রণা কমে যায়। কিন্তু কিছু দিন পর থেকে হাতের ওই অংশে পচন শুরু হতে থাকে। হাতের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয় পরিবারটিকে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানা, কলকাতা স্বাস্থ্য ভবন, ‘দিদিকে বলো’তে জানিয়েছেন অনুপমার পরিবার। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারটির।
অনুপমার মা বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করেন। বাবা দিনমজুর। তিন বোন, এক ভাই। ভাই প্রতিবন্ধী। এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মা, দিদিকে সঙ্গে নিয়ে আসেন অনুপমা। সেখানেই তিনি এ দিন বলেন, ‘আমার যা ক্ষতি করার করেই দিয়েছে। এক ঠিকাদারের অধীনে বিদ্যুতের মিটার রিডিংয়ের কাজ করতাম। এখন তাও করতে পারি না।
আমি চাই, এমন ঘটনা আর কারও ক্ষেত্রে যেন না ঘটে। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছি সুবিচারের আশায়। কিছুই পাইনি। যে চিকিৎসক আমার অপারেশন করেছিলেন, তিনি হাসপাতাল থেকে আমাকে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে যেতে বলেন। সেখানে আমার চিকিৎসার ভার অন্য এক চিকিৎসককে দিয়ে তিনি পালিয়ে যান। তারপর এই অবস্থা। হাত তুলতে পারি না। আমরা গরিব মানুষ, যাব কোথায়?’
ওই ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘ওই তরুণী তাঁর ঘটনার কথা আমাদের জানিয়েছিলেন। আমরা বিষয়টি ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলকে জানিয়েছি। কাউন্সিল সরাসরি তাদের কাছে অভিযোগ করার জন্য বলেছে।’ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের এক আধিকারিক বলেন, ‘অনেকদিন আগেকার ঘটনা। ঠিক কী হয়েছিল খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’