• সাইবার কোর্ট! নয়া প্রতারণা নিউ ইয়ারেই, তৎপর পুলিশ
    এই সময় | ১২ জানুয়ারি ২০২৫
  • দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না। আর সাইবার প্রতারকদের ঘাটতি হয় না লোক ঠকানোর আইডিয়াতে!

    ডিজিটাল অ্যারেস্ট, ডিজিটাল ডিটেনশন এবং ডিজিটাল সার্চিং এখন নতুন কোনও অপরাধ নয়। গত দু’বছরের মধ্যে এই শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের। কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেব বলছে, গত বছরের প্রথম তিনমাসে শুধুমাত্র ডিজিটাল অ্যারেস্টের জেরে দেশের আম আদমির পকেট থেকে গচ্চা গিয়েছে ১২০ কোটি টাকা।

    অন্যদিকে, একটি বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনা ঘটেছে। এই অপরাধ থেকে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি পকেটে ঢুকিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাইবার প্রতারকরা। কিন্তু এ সবের মধ্যেই নতুন বছরে বাজারে হাজির হয়েছে সাইবার অপরাধের নয়া সংস্করণ, ‘সাইবার কোর্ট।’

    মাত্র এক সপ্তাহ আগে মধ্যপ্রদেশে চাকুরিরত দক্ষিণ কলকাতার এক বাসিন্দা প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে ভার্চুয়ালি ঢুকে পড়েন এই নতুন অপরাধের বৃত্তে। বিশ্বজিৎ দাস নামে ওই ব্যক্তি জব্বলপুরে একটি মেডিক্যাল সরঞ্জাম সংস্থার উঁচু পদে রয়েছেন। বিশ্বজিতের কথায়, ‘আমার কাছে কাজের সূত্রে নানা জায়গা থেকে ফোন আসে। বেশিরভাগ কল আমি রিসিভ করি, তাই সেটাও করেছিলাম। সে সময়ে আমাকে বলা হয়, আমরা এনসিবি (নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো) হেড অফিস থেকে বলছি। আপনি ওমুক সংস্থার বড় পদাধিকারী, ফলে আপনার নাম করে ড্রাগ পাচারের অভিযোগ আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে আপনার নামে পার্সেল–ভর্তি ড্রাগ বাজেয়াপ্ত হওয়ায় আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আপনাকে অ্যারেস্ট করার জন্য। কিন্তু সেটা না করে সরাসরি সাইবার কোর্টে আপনি হাজির হতে পারেন। মাদক মামলা খুব সিরিয়াস অপরাধ।’

    এরপর কী হলো?

    বিশ্বজিৎ বলেন, ‘কিছু ক্ষণের মধ্যে একটা লিঙ্ক পাঠিয়ে সেখানে বেশ কিছু তথ্য জানাতে বলা হয়। তার মধ্যে ছিল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, প্যান কার্ড নম্বর–সহ আরও অনেক ব্যক্তিগত তথ্য। সেটা পাঠানোর পরে ভিডিয়ো কল করা হয় আমাকে। অন্য প্রান্তে দেখতে পাই কোনও পুলিশ অফিসার নয়, কালো কোট পরিহিত এক ব্যক্তি যেন আদালতের এজলাসে বসে রয়েছেন। তিনি হিন্দি এবং ইংরেজিতে চোস্ত কথা বলছেন। এজলাসের ঠিক পাশে একটি কাঠের বক্স মতো জায়গায় এক ব্যক্তি সাদা জামা পরে আমার হয়ে সওয়াল করছেন।

    আইনের মারপ্যাঁচ আমি বুঝি না। তবে যেটুকু বুঝলাম, আমার বিরুদ্ধে নারকোটিক সাবস্ট্যান্স অ্যাক্টে কলকাতা বিমানবন্দর এলাকার কোনও থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বিচারক ওখানে বসে আমার আইনজীবী সেজে থাকা ব্যক্তির কাছে পুরোটা শুনে এটাকে ‘গুরুতর অপরাধ’ বলে মন্তব্য করলেন। কঠিন ধারা থেকে জামিন পেতে আমার বেল মানি ধার্য করা হলো ৭০ হাজার টাকা। তবে সবচেয়ে জটিল বিষয় হলো, গোটা প্রক্রিয়ায় আমার ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকা এবং অনলাইনে টাকা পেমেন্ট করা ছাড়া আর কোনও কাজ ছিল না।’

    বিশ্বজিৎ যে সংস্থায় চাকরি করেন, সেখানে তাঁর সহকর্মী, শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ার বাসিন্দা রাজীব বসু। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, পুরো ঘটনাটি পরিচালনা করা হয়েছে দিল্লি থেকে। তবে অভিযুক্তদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘আমার ব্যাঙ্ক থেকে সঙ্গে সঙ্গে টাকা না–তোলায় পেমেন্ট স্টপ করিয়ে দিয়েছি। তবে যে ভাবে দ্রুততার সঙ্গে পুরো অপারেশনটি করা হয়েছে, তাতে সমঝদার লোকও বোকা হয়ে যাবে। এ ভাবে যে ভুয়ো আদালত তৈরি করা যায়, সেটা কোনওদিন ভাবতে পারিনি।’

    সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘সাইবার অপরাধীরা কিছুদিন পর পর নিজেদের স্ট্র্যাটেজি চেঞ্জ করে। সুতরাং একটা কথাই বলব, সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। আর বিকল্প কিচ্ছু নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)