এই সময়, গঙ্গাসাগর: ঠান্ডায় জবুথবু গঙ্গাসাগরে শনিবার সকাল থেকেই নামল পুণ্যার্থীদের ঢল। কাকদ্বীপের লট নম্বর আটের ভেসেল ঘাটে কুয়াশার মধ্যে মুড়িগঙ্গা নদী পেরনোর জন্য ভোর থেকে যাত্রীদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। ঘন কুয়াশায় সকাল থেকে ভেসেল ধীর গতিতে চলায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভিন রাজ্যের মানুষদের। প্রশাসনের তৎপরতায় কুয়াশা কাটতেই ভেসেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ দিন বাবুঘাট, হাওড়া ও ধর্মতলা থেকে বাসে যাত্রীরা চলে আসেন কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্টে। কেউ আবার শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা থেকে ট্রেনে আসেন কাকদ্বীপ ও নামখানাতে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গঙ্গাসাগর মেলার জন্য অতিরিক্ত ১২টি স্পেশ্যাল ট্রেন চলবে ১২ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই ১২টি ইএমইউ মেলা স্পেশালের মধ্যে শিয়ালদা দক্ষিণ থেকে তিনটি, কলকাতা স্টেশন থেকে দু’টি, নামখানা থেকে পাঁচটি, লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে একটি এবং কাকদ্বীপ থেকে একটি ট্রেন ছাড়বে। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, শিয়ালদা দক্ষিণ থেকে অতিরিক্ত তিনটি মেলা স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে সকাল ৬.১৫ (নামখানা), দুপুর ২.৪০ (নামখানা) এবং বিকেল ৪.২৪ (লক্ষ্মীকান্তপুর)। এগুলি ১৩ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে কলকাতা স্টেশন থেকে।
মেলা স্পেশ্যাল ট্রেনগুলি বালিগঞ্জ, সোনারপুর, বারুইপুর, লক্ষ্মীকান্তপুর, নিশ্চিন্দপুর এবং কাকদ্বীপ স্টেশনে থামবে। কলকাতা স্টেশন থেকে আসা মেলা–স্পেশ্যাল ট্রেনগুলি কলকাতা ও মাঝেরহাটের মধ্যে সমস্ত স্টেশনে থামবে। পরে গ্যালপিং হয়ে যাবে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতো ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কাশীনগর হল্ট স্টেশনে কোনও ট্রেন থামবে না।
হারউড পয়েন্টের লট নম্বর আটের জেটিঘাটগুলির তদারকি করছেন কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা। ভিড় এড়াতে ইতিমধ্যে অনেক পুণ্যার্থী স্নান সেরে ফিরেও আসছেন মেলা থেকে। প্রতিদিন মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার থেকে প্রচুর পুণ্যার্থী মেলায় আসছেন। আশেপাশের সমস্ত এলাকায় ফ্লেক্স, ফেস্টুনে একটি বিশেষ কিউআর কোড লাগানো হয়েছে।
সেই কিউআর কোডে পুণ্যার্থীরা মোবাইল দিয়ে স্ক্যান করলে সন্নিহিত এলাকার যাবতীয় তথ্য জেনে যাবেন। মেলা চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ দিন ভোরে সাগরতট জুড়ে হরিনাম সংকীর্তনের সুরে মেতে ওঠেন ইসকনের ভক্তরা। প্রায় ৫০ জনেরও বেশি বিদেশি ভক্ত শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
সকালে ইসকনের শোভাযাত্রার পরেই সাগর প্রবচন শুরু হয়। সন্ধ্যায় শুরু হয় মহাসাগর আরতি। সাগরতটের ২ নম্বর রাস্তার পাশের মঞ্চে চোখধাঁধানো এই আরতি চলে ঘণ্টা দুয়েক। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে সাগর প্রবচন ও মহাসাগর আরতি। কপিলমুনির আশ্রমের চূড়ার আলোয় বিচ্ছুরিত গোটা মেলা। কচুবেড়িয়া জেটিঘাট ও মুড়িগঙ্গা নদীর ওপর হাইটেনশন বিদ্যুতের খুঁটি সাজানো হয়েছে রঙিন আলোকমালায়। এ বার ১২ জন মন্ত্রী সাগরমেলা, কচুবেড়িয়া ও লট নং আটে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।