• লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা নিচ্ছেন ‘সচ্ছল’ আরএসএস নেতার স্ত্রী
    বর্তমান | ১২ জানুয়ারি ২০২৫
  • রাজু চক্রবর্তী, কলকাতা: মহিলা সশক্তিকরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুগান্তকারী প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। ২০২১ সালের ভোটের আগে চালু হওয়া এই আর্থিক অনুদান গেম চেঞ্জার হিসেবে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। যদিও বঙ্গ নারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো আর্থিক এই অনুদানের ঘোর বিরোধী বিজেপি। এমনকী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) শীর্ষ পদাধিকারীদের অভিমত, ভোট কিনতে এভাবে ‘নগদ ডোল’ দিয়ে মহিলাদের অসম্মান করা হচ্ছে। বাস্তবে নিজেদের মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে মমতার এই নগদ সাহায্য নেওয়ার অভিযোগ উঠল আরএসএস’র অন্যতম শীর্ষ নেতার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, আথিকভাবে সচ্ছল দেশবাসীর কাছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবেদন করেছেন, গ্যাস সিলিন্ডারে প্রাপ্ত ভর্তুকি ত্যাগ করতে। কেবলমাত্র আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা সহ নাগরিকদের জন্য সিলিন্ডার প্রতি এই আর্থিক ভর্তুকির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন মোদি। একইভাবে প্রান্তিক শ্রেণির মহিলাদের হাতে নগদ টাকার জোগান নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু হয়েছিল। সেক্ষেত্রে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের মহিলাদের এই টাকা না নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।


    এক্ষেত্রে আরএসএস’র দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগ কার্যবাহ (সাধারণ সম্পাদক) সুকুমার নস্করের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আর্থিকভাবে যথেষ্ট সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর স্ত্রী প্রতিমাসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা নিচ্ছেন। সুকুমারবাবু দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্গত জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার এবং যাদবপুর লোকসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় সঙ্ঘের শীর্ষ নেতা। কেবলমাত্র বিজেপি নয়, আরও প্রায় ৩৫টি গেরুয়া মনোভাবাপন্ন সহযোগী সংগঠনে তাঁর নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নাতীত। এহেন প্রভাবশালী সঙ্ঘ নেতা পেশায় সরকারি স্কুলের (শ্রীচন্দা এমএনএম ইনস্টিটিউশন) প্রবীণ শিক্ষক। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, মাসে প্রায় ৮০ হাজার টাকা বেতন পান তিনি। 


    কুলতলির বাসিন্দা সুকুমারবাবু কয়েক বছর আগে থেকে ডায়মন্ডহারবারে পাকাপাকি থাকতে শুরু করেন। তাঁর ভাইপো উৎপল নস্কর বর্তমানে রাজ্য বিজেপির জয়নগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে রয়েছেন। স্বভাবতই সুকুমারবাবুর সঙ্গে বিজেপি তথা সঙ্ঘের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।


    বঙ্গ বিজেপির একাধিক নেতার অভিযোগ, নিজের পদকে ব্যবহার করে সুকুমারবাবু সংগঠনের ক্ষতি করছেন। তাঁর কাজকর্মে সঙ্ঘের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলেও গেরুয়া শিবিরে চর্চা চলছে। তাঁদের যুক্তি, গত কয়েক বছরে ডায়মন্ডহারবার সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়ে হিন্দুদের উপর আক্রমণ নেমে এসেছে। সেখানে সুকুমারবাবুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিধানসভা, লোকসভায় বিজেপির প্রার্থী মনোনয়নে তাঁর মতামত অত্যন্ত গুরুত্ব পায় বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিজেপি ভোটে খাতাই খুলতে পারেনি। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন সুকুমার নস্কর। তবে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর স্ত্রী দীপিকা নস্কর গত তিন বছর ধরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা নিচ্ছেন। কেন নিচ্ছেন, সেটা তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করার পরমর্শ দেন। পরে অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন করেন, বিজেপি নেতারা সরকারি রেশন সহ একাধিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা নেন, তাতে দোষ হয় না?                
  • Link to this news (বর্তমান)