• থাকবে না গ্রামই! আবাসের টাকা ঢুকলেও বাড়ি তৈরি ঘিরে অনিশ্চয়তা, আজব সমস্যা জয়ন্তীতে
    প্রতিদিন | ১২ জানুয়ারি ২০২৫
  • রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: আবাসের টাকা ঢুকেছে কিন্তু ঘর তৈরি করতে পারছেন না গ্রামবাসীরা! আজব সমস্যায় বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভিতরের জয়ন্তী গ্রামের বাসিন্দারা। আসলে গ্রামটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বনদপ্তরের। ইতিমধ্যে আবাসের টাকা ঢোকায় গ্রামের পুনর্বাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আবার আবাসের টাকা ঢুকলেও অনিশ্চয়তার জেরে বাড়ি তৈরি করতে পারছেন বাসিন্দারা। সবমিলিয়ে আজব সমস্যায় জয়ন্তীবাসী।

    আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়েছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জয়ন্তী বনগ্রাম। জয়ন্তী পাহাড় ও নদী ঘেঁষে থাকা জয়ন্তী অনেক দিনের পুরনো জনপদ। পর্যটকদের কাছে এই জনপদের আকর্ষণও খুব। কিন্তু সেই জয়ন্তীকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভিতর থেকে বাইরে বের করার পরিকল্পনা করেছিল বনদপ্তর। এই পরিকল্পনার মাঝেই গ্রামের বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনার টাকা ঢোকায় গ্রাম সরানোর প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক দেবব্রত রায় বলেন, “জয়ন্তী গ্রামের বাসিন্দারা আবাস যোজনার টাকা পেয়েছেন। ওঁদের জমি সংক্রান্ত একটি সমস্যা রয়েছে। সেই কারণে এখনও আবাস তৈরি শুরু করতে পারেননি ওখানকার বাসিন্দারা। প্রশাসন দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান করে দেবে।” আবার ডিস্ট্রিক ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মানব বক্সি বলেন, “প্রশাসনিক মহলে আমরা খবর পেয়েছি জয়ন্তী গ্রামকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে এই মুহুর্তে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে চাইছে না। তবে আবাস যোজনায় টাকা পেলে আবার উচ্ছেদ কীভাবে সম্ভব?”

    গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, আবাস যোজনায় জয়ন্তীতে ৭১ জনের নাম ছিল। এর মধ্যে ৬০টির মত পরিবার আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পেয়ে গিয়েছেন। ২৬ ডিসেম্বর থেকে জয়ন্তীর বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা ঢুকতে শুরু করেছে। গ্রামের বিনয় প্যাটেল, আকাশ মাহাতো, বুল্টি বর্মনের মত অনেকেই আবাস যোজনায় ৬০ টাকা পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু টাকা হাতে পেলেও এখনও আবাস তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়নি জয়ন্তীর বাসিন্দাদের। অগত্যা আবাসের টাকা অনেক গরিব মানুষই অন্যখাতে খরচ করে ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

    আবাসের টাকা পেয়েছেন রবি প্যাটেলের বাবা প্রেমকুমার প্যাটেল। রবি প্যাটেল বলেন, “জয়ন্তীর অনেকেই আবাস যোজনার টাকা পেয়ে গেছি। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত আমাদের বলেছে দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে। তার পর আমরা ঘর তৈরি করব কিনা তা জানাবে। কিন্তু আমাদের অনেকেই টাকা খরচ করে ফেলছে। আমরা চাই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত জানাক প্রশাসন। বনদপ্তর আমাদের গ্রামকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। আমরা অনুমতিও দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো বনদপ্তর কোনও উচ্চবাচ্য করছে না। অনেকে বলছে, ওটা বাতিল হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিশ্চিত করে এখনও কেউ কিছু জানায়নি।” জয়ন্তীর স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য লালন মাহাতো বলেন , “জয়ন্তীতে আবাস যোজনায় ৭১ জনের নাম ছিল। তার মধ্যে ৬০ জনের পরিবারের অ্যাকাউন্টে ৬০ হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে। এই টাকায় জয়ন্তীতে ঘর তৈরি করবে কিনা তা নিয়ে প্রশাসনিকস্তরে আলোচনা চলছে।” বিষয়টি নিয়ে রাজ্য বনদপ্তরের কোনও কর্তাই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
  • Link to this news (প্রতিদিন)