এইসময়, বহরমপুর: কেউ মাধ্যমিক পাশ, কেউ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। অভাবের জন্য ছাড়তে হয়েছে পড়াশোনা। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে এগিয়ে এসেছেন রুবিনা, সনিয়া, ফরিদারা। রাজ্য সরকারের উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে শোলার কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনির্ভর হয়েছেন বহরমপুর ব্লকের হেকমপুরের ৬৬ জন মহিলা। এখন কখনও তাঁদের দেখা যাচ্ছে শোলার মুকুট তৈরি করতে, আবার কখনও শোলার পদ্মফুল তৈরি করছেন, যা বিকোচ্ছে বাজারে।
মাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়ার সুযোগ পাননি বহরমপুরের হেকমপুরের বাসিন্দা রুবিনা খাতুন। বাবা মিনারুল শেখ রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তাঁর আর কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে রুবিনাকে। তাই গ্রামের এক স্কুলে শোলার কাজ শিখতে শুরু করেন রুবিনা। তাঁর লক্ষ্য ছিল বাড়িতে থেকে শোলার কাজ করে যদি কোনও ভাবে সংসার চালানো যায়।
রুবিনা বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই–বোন। বাবা অসুস্থ। কাজ না করলে খুব সমস্যায় পড়ব। মাধ্যমিক পাশ করার পর ইচ্ছা থাকলেও আমি আর পড়তে পারিনি। বাবা বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে দিতে চাইতেন না। তাই শোলার কাজ শিখে বাড়িতেই শোলার বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে পারছি। যা এখন বাজারজাত হচ্ছে। আমার হাতে টাকা আসছে।’ স্বনির্ভর হতে শোলার কাজ শিখেছেন ফরিদা বিবিও। তিনি বলেন, ‘স্বামীর রোজগারে সংসার চলে না। তাই নিজে শোলার কাজ শিখতে শুরু করি। যে স্কুলে এই কাজ শেখানো হতো সময় করে সেখানে চলে আসতাম।’
শোলা দিয়ে এখন অনেক জিনিস তৈরি করতে পারেন ফরিদা। এই দিয়েই আরও বেশি রোজগারের আশায় তিনি। যা দিয়ে মেয়েকে পড়াশোনা করাতে চান। প্রায় দু’বছর ধরে শোলার কাজ শিখে উপার্জন করছেন সনিয়াও। তিনি বলেন, ‘আমি এই কাজ শিখে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। অন্য ছেলে–মেয়েদের এই কাজ শেখাই। আমি চাই আমার মতো ওঁরাও এই কাজ শিখে রোজগার করুক।’
বিভিন্ন পুজোর সামগ্রী থেকে শুরু করে হরেক রকমের শোলার জিনিসপত্র এখন বাজারে খুবই বিক্রি হয় বলে দাবি প্রশিক্ষক সামসুল শেখের। তিনি উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পে এই ৬৬ জন মহিলাকে শোলার কাজ শেখান। তাঁর কথায়, ‘কোনও পুজো এলেই শোলার মালা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের পুজোর জিনিসপত্র বিক্রি হয়। বিয়েতে শোলার মুকুট ব্যবহারের প্রচলন আছে। এখন অনেক রকমের ডিজাইন করে শোলার মুকুট তৈরি করা হয়। এগুলি সবই খুব ভালো বিক্রি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক মহিলারাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজ করতে চান না। কিংবা নানা সমস্যায় তা হয়ে ওঠে না। তাই যাতে বাড়ি বসে মহিলারা উপার্জন করতে পারেন, তাই সরকার থেকে এই কাজ শেখানো হচ্ছে। তাঁদের হাতের তৈরি জিনিস বিক্রির ব্যবস্থাও আমরা করে দিই।’