সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
ভিটের চারপাশে সীমানা পাঁচিল দেওয়া হয়েছে। প্রবেশদ্বারে বসেছে লোহার গেট। ভিটেয় কংক্রিটের পিলার তৈরি করে শুরু হয়েছে ভবন নির্মাণের কাজও। কালনা শহর লাগোয়া দত্ত দ্বারিয়াটন গ্রামে স্বামীজির পৈতৃক ভিটে সেজে ওঠায় খুশি এলাকার বাসিন্দারা।
কালনার এই গ্রামে রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দর পৈতৃক শিকড়। স্থানীয় মানুষের দাবি, অবহেলায় আগেই ধ্বংস হয়েছে পৈতৃক ভিটে। তারপর এই অমূল্য স্মৃতি একরকম হারিয়ে যাচ্ছিল। ২০২৪ সালে স্বামী বিবেকানন্দর জন্মদিনে ভিটের সেই জমির মালিকানা পায় রামকৃষ্ণ মিশনের বর্ধমান শাখা। সেদিন ভিটের জমিতে বড় লাইব্রেরি, সংগ্রহশালা–সহ বেশ কিছু জিনিস গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের বর্ধমান শাখার সম্পাদক স্বামী অজ্ঞায়ানন্দ।
গত এক বছরে সে সব গড়ে তোলার কাজ এগিয়েছে। আজ, রবিবার স্বামী বিবেকানন্দর জন্মদিনে পৈতৃক ভিটেয় সারাদিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রামকৃষ্ণ মিশন।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের স্মৃতিতে আজও ভেসে ওঠে স্বামীজির পরিবারের বেশ কিছু ছবি। তাঁদের কাছ থেকে জানা যায়, স্বামীজির ভাই ভূপেন্দ্রনাথ বেশ কয়েক বার নিজে পৈতৃক ভিটেতে এসেছিলেন। একবার তিনি পৈতৃক ভিটের সীমানাও নির্ধারণ করে যান। বছর কয়েক আগে ভিটের দু’প্রান্তে থাকা বাথরুম ও কিছু ভগ্নাবশেষ ছিল। এখন তা আর নেই। কিন্তু ওই ভিটে লাগোয়া একটি পুকুর আছে, যা দত্ত তালপুকুর নামে পরিচিত। তা আজও রয়েছে।
এই মাটিতে বেড়াতে এসে প্রণাম করেন অনেকেই। ভিটের মাটিও সঙ্গে করে নিয়ে যান বছরের বিভিন্ন সময়ে আসা বহু ভক্ত। বিদেশ থেকেও আসেন ভক্তরা। এই বাড়ি সম্পূর্ণ হলে ভক্তদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দত্ত পরিবার কলকাতার সিমলায় চলে গেলেও তাঁদের আদি বাড়ি ছিল কালনার দত্ত দ্বারিয়াটন গ্রামে। স্বামী বিবেকানন্দর ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘স্বামী বিবেকানন্দ-প্যাট্রিয়ট অ্যান্ড প্রফেট’ গ্রন্থে সে কথা উল্লেখ আছে। বইয়ে দত্ত দ্বারিয়াটন গ্রামে ভিটের ছবিও রয়েছে। সেই ভিটের জমিতে বছর কয়েক আগে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতি মন্দির। এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা তপন দাস বলেন, ‘বিবেকানন্দর পৈতৃক ভিটের জমিতে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। আমরা এটাই চেয়েছিলাম। রামকৃষ্ণ মিশন সেই আশা পূরণ করবে।’ আরও এক বাসিন্দা সীতেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এতদিন অবহেলিত অবস্থায় পড়ে ছিল। রামকৃষ্ণ মিশন পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করায় আমরা খুশি। ইতিমধ্যে স্মৃতি মন্দিরে মহিলাদের সেলাই শেখানো শুরু হয়েছে। এলাকার উন্নয়ন হবে।’