মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্যালাইন কাণ্ডে অসুস্থ প্রসূতিদের স্বাস্থ্য নিয়ে আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রবিবারই গ্রিন করিডর করে মাম্পি সিং, নাসরিন খাতুন-কে নিয়ে যাওয়া হবে এসএসকেএম হাসপাতালে, সূত্রের খবর এমনটাই। তবে এ প্রসঙ্গে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী জানিয়েছেন, প্রসূতিদের কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হবে কি না, হলে কত জনকে করা হবে, এই সিদ্ধান্ত নেবে ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বোর্ড’। হাসপাতালের সমস্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে তৈরি হয়েছে এই বোর্ড। এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যালে ৩টি ‘লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুল্যান্স’ পৌঁছয়।
সূত্রের খবর, মাম্পি এবং নাসরিনের শারীরিক অবস্থা ‘সঙ্কটজনক’। আর এক প্রসূতি মিনায়ারা বিবির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও তিনি পুরোপুরি বিপন্মুক্ত নন বলেই সূত্রের খবর। তাঁকেও কলকাতায় স্থানান্তরিত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্রের খবর, শনিবারই স্যালাইন কাণ্ডের তদন্তে এসে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এই প্রসূতিদের এসএসকেএম-এ স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, নাসরিনের পরিবারের দাবি, তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে আগের থেকে। নাসরিনের চিকিৎসা হোক মেদিনীপুর মেডিক্যালেই, চাইছেন তাঁরা।
রবিবার স্যালাইন কাণ্ডে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী এবং প্রসূতি বিভাগের প্রধান আলাউদ্দিনকে তলব করা হয়েছিল স্বাস্থ্য ভবনে। সূত্রের খবর, এ দিন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁরা। স্বাস্থ্য সচিবের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁদের, জানা গিয়েছে এমনটাই।
প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বুধবার ৬ জানুয়ারি রাতে সিজ়ার হয়েছিল ৫ প্রসূতির। স়িজারের পরেই তাঁরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের স্থানান্তরিত করা হয় ICU-তে। শুক্রবার ভোরে মামনি রুইদাস নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয় সেখানেই।
প্রসূতিদের পরিবাররা মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছিল তদন্ত। শিলিগুড়ির ফার্মা সংস্থা ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’-এর সরবরাহ করা ‘রিঙ্গার ল্যাকটেট’ (স্যালাইন)-এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াই দায়ী বলে প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর। গত ১০ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয় ড্রাগ কন্ট্রোলের তরফে। সেক্ষেত্রে এই নিষিদ্ধ আরএল কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল হাসপাতালে? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
এই ঘটনার তদন্তে তড়িঘড়ি তদন্তকারী কমিটি গঠন করা হয় স্বাস্থ্য ভবনের পক্ষ থেকে। এ দিকে স্যালাইন কাণ্ডে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। রবিবার মেদিনীপুর শহরে এই ঘটনায় বিক্ষোভ দেখান বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বিজেপিও স্যালাইন কাণ্ডে সরব। যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, স্বাস্থ্য ভবন গুরুত্ব দিয়ে সমস্ত বিষয়টির তদন্ত করছে। অসুস্থদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।