• মাইকের তাণ্ডব থামাতে গিয়ে আক্রান্ত কনস্টেবল
    এই সময় | ১২ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, বর্ধমান: শীত এ‍লেই আতঙ্ক তাড়া করে। শব্দদানবের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের প্রাণপাখি খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়। পিকনিকের অছিলায় ডিজে আর মাইকের বিকট আওয়াজে টেকা দায়। বহু অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশের কাছে। কিন্তু, শুনেও গা করে না পুলিশ। এ বার সেই ডিজের উপদ্রব আটকাতে গেলে মার খেতে হলো পুলিশকেই।

    তার পরেই রণংদেহী মেজাজে এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯ জন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় ডিজে সমতে অজস্র মাইক। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুলিশ মার খেয়েছে বলে ব্যবস্থা নিল। অথচ সাধারণ মানুষ এত দিন ধরে বলে এলেও তাতে কান দেওয়া হয়নি।

    শুক্রবার সন্ধ্যায় পূর্ব বর্ধমানের দেওয়ানদিঘি থানা এলাকার কুরমুনে পিকনিক থেকে ফেরার পথে প্রায় ৫০টি মাইক ও ডিজে একটি ট্র্যাক্টর বেঁধে তারস্বরে আওয়াজের সঙ্গে চলছিল নাচ। বর্ধমান-নবদ্বীপ রোডে নাচতে নাচতে যুবকরা চলে আসে রাস্তার মাঝে। তাতে যানজট তৈরি হলে প্রতিবাদ করেন যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেওয়ানদিঘি থানার পুলিশ এলাকায় গেলে বচসায় জড়িয়ে পড়ে ওই যুবকরা। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে চলতে থাকে কুমন্তব্য। পুলিশ ওই যুবকদের রাস্তা ছেড়ে পাশের ফাঁকা জমিতে যাওয়ার কথা বলে।

    কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় মিউজিক সিস্টেম খুলতে যায় পুলিশ। তখনই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করে ওই যুবকরা। একটি ইট এসে লাগে কর্তব্যরত কনস্টেবল গঙ্গাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কপালে। তাঁর কপাল থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করে। পুলিশ তেড়ে গেলে ওই যুবকদের অনেকেই পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৯ যুবককে। জখম গঙ্গাপ্রসাদকে আনা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে তাঁর চোখ।

    এর পরে দেওয়ানদিঘি থানার ওসি ও জেলা পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা এলাকায় অভিযান চালান। ৪টে ডিজে বক্স, ৪৫টি মাইক ও একটি জেনারেটর বাজেয়াপ্ত করা হয়। সাউন্ড সিস্টেম বসানো ট্র্যাক্টরটিও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। ধৃত রবিন রায়, সনাতন ধারা, চিরণ রানা, চন্দন ধাড়া, সাগর রানা, কমল হালদার, সাধন রায়, সনৎ বাগ ও বিজয় মালকে শনিবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। ধৃতদের মধ্যে রবিন, সনাতন, চিরণ, চন্দনকে ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকি অভিযুক্তদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।

    কুরমুন গ্রামের বাসিন্দা অলোক ঘোষ বলেন, ‘সেই ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ থেকে এই অত্যাচার শুরু হয়েছে। আমরা এলাকায় টিকতে পারতাম না। কী ভাবে এরা বিনা অনুমতিতে ডিজে, মাইক বাজানোর সাহস পায়? ডিজে তো নিষিদ্ধ। আজ পুলিশ মার খেয়েছে বলে তারা এত সক্রিয়। সাধারণ মানুষ মার খেলে পুলিশ কি এত সক্রিয় হতো?’

    জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে নাচের সময়েই ওই যুবকদের কাছে অনুমতি রয়েছে কি না তা জানতে চায় পুলিশ। কোনও কাগজ তারা দেখাতে না পারায় মাইক বন্ধ করতে বলা হয়। তখন পুলিশই আক্রান্ত হয়। অনুমতিহীন মাইক ও ডিজে নিয়ে পিকনিক করতে গেলে পুলিশ আগেও ব্যবস্থা নিয়েছে, আগামী দিনেও নেবে।’

  • Link to this news (এই সময়)