• অবিকল মা! শাশুড়িকে ফিরিয়ে আনলেন পুত্রবধূ, আনন্দে চোখে জল ছেলের
    এই সময় | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • সৌমেন রায়চৌধুরী

    ‘চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে’। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর এই কথাগুলো ভীষণ ভাবে এই ১০টা বছর অনুভব করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার। পরিবারের কর্ত্রী রানু গঙ্গোপাধ্যায় ১০ বছর আগে মারা গিয়েছেন। কিন্তু মাঝের এই সময়টা, ছেলে, মেয়ে, বউমা একটি বারের জন্যও তাঁকে ভুলতে পারেননি। বারবার মনে হয়েছে, যদি মা সারা জীবন থেকে যেতেন। রানুদেবীর একমাত্র বউমা রেখা গঙ্গোপাধ্যায় তাই ঠিক করেন, মাকে ফিরিয়ে আনবেন। মৃত্যুর ১০ বছর পর তাই নব কলেবরে সংসারে ফিরলেন রানুদেবী। তাঁর থাকা আর না-থাকার মধ্যে তফাৎটা মনে মনে মুছে গেল। সৌজন্যে বিরাটির সুবিমল দাস। এত দিনে যিনি সিলিকন মূর্তি তৈরির শিল্পী হিসাবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাঁর হাতে তৈরি রানুদেবীর সিলিকন মূর্তি এসে পৌঁছেছে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাড়িতে।

    রানুদেবীর ছেলে কর্নেল সিএস গঙ্গোপাধ্যায়, মেয়ে চন্দনা মুখোপাধ্যায়, বউমা রেখা গঙ্গোপাধ্যায়। দুই নাতনি তন্নিষ্ঠা ও অনুষ্কা। রানুদেবীর ছেলে সিএস গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি মাকে হারান। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য মাকে ভুলতে পারেননি। তবে স্ত্রী রেখা যে এ ভাবে চমকে দেবেন তা তাঁর জানা ছিল না। গোটা বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে রেখা ও তাঁর বড় মেয়ে তন্নিষ্ঠা সেরেছেন।

    রেখা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘কোনওদিন উনি আমার কাছে শাশুড়ি ছিলেন না, মা ছিলেন। মাকে দেখতাম কোনও অভিযোগ ছাড়া উনি কী ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উনি চলে যাওয়ার পর সব সময়ে মিস করতাম। ১০ বছরেও এই শূন্যস্থান পূরণ হয়নি। তাই ভাবলাম মাকে ফিরিয়ে আনতে পারলে খুব ভালো হয়। বিজ্ঞান এতটা এগিয়ে গিয়েছে, এত ভালো একজন শিল্পীকে পেয়েছি। তাই ভাবলাম মাকে আবার ফিরিয়ে আনলে কেমন হয়?’

    সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট দেখে এই পরিকল্পনা আসে তাঁর মাথায়। সুবিমল দাসের কথা শুনে তাঁর মনে হয়েছিল উনি সেই মানুষ, যিনি তাঁর শাশুড়িকে সংসারে ফিরিয়ে দিতে পারেন। রেখা বলেন, ‘স্বামীকে জানাইনি। চমকে দিতে চেয়েছিলাম। মা আমাদের সঙ্গে আজীবন থাকবেন, পরের প্রজন্মের কাছেও মা থেকে যাবেন, শুধু এটাই চেয়েছিলাম।’

    শিল্পী সুবিমল দাস জানান, রেখা একটি ছবি দিয়েছিলেন শাশুড়ির। তা দেখে প্রায় ২ মাসের মধ্যে সিলিকনের মূর্তিটি বানান। এর আগে এমন মূর্তি তিনি গড়েছেন। কোভিডে মারা গিয়েছিলেন কৈখালির তাপস শাণ্ডিল্যের স্ত্রী ইন্দ্রাণী শাণ্ডিল্য। এয়ারপোর্ট অথরিটির অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তাপস শাণ্ডিল্য যোগাযোগ করেছিলেন সুবিমল দাসের সঙ্গে। সুবিমলের হাত ধরেই ঘরে আবারও ঘরে ফেরেন শাণ্ডিল্য-ঘরণী। এ বারও তেমনটাই হলো। সামনেই রানুদেবীর ১১ বছরের কাজ। তার আগে এমন ভাবে তিনি ঘরে ফিরলেন, আবেগে চোখ ছলছল বাড়ির সকলের।

    সুবিমল দাসের কথায়, ‘আগেও এই কাজ করেছি, তবে এটা একদম একটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা। রেখাদেবী পরিবারকে সারপ্রাইজ় দেবেন বলে এসেছিলেন। ফলে পরিবারের কাউকে আগে জানানো হয়নি। কাজটা সকলের খুব ভালো লেগেছে, এটাই বড় পাওয়া। ওনার ছেলে দেখে কেঁদে ফেলেছেন। এই আবেগই তো একজন শিল্পীর পরম প্রাপ্তি।’

  • Link to this news (এই সময়)