• কাটোয়ার কোশিগ্রামে প্রথা মেনে মাঠে রান্না করে খেলেন গ্রামবাসী
    বর্তমান | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: কাটোয়ার কোশিগ্রামে পৌষ সংক্রান্তির একদিন আগে প্রাচীন প্রথা মেনে ঘর ছেড়ে মাঠে খাওয়াদাওয়া করেন বাসিন্দারা। গ্রামে মারণ রোগ ঠেকাতে বহুদিন আগে নাকি এক ফকিরবাবা এই বিধান দিয়েছিলেন। সেই থেকে পৌষ সংক্রান্তিতে এই নিয়ম চলে আসছে। রবিবার কোশিগ্রামের বাসিন্দারা হাঁড়িকুড়ি, হাতাখুন্তি নিয়ে গ্রামের বাইরে মাঠে এসে রান্না করে খাওয়াদাওয়া সারেন। কেউ ডালভাত, কেউ খিচুড়ি-বেগুনভাজা খেলেন। ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও বনভোজনের আনন্দে দিনটি কাটল।বহুদিন ধরেই কোশিগ্রামে এই প্রথা চলে আসছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, বহুবছর আগে গ্রামে মারণ রোগ কলেরার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। তখন নদীয়া জেলার বল্লভপাড়া থেকে এক ফকির কোশিগ্রামের মাঠে এসেছিলেন। কলেরা থেকে রেহাই পেতে গ্রামের লোকজন তাঁর দ্বারস্থ হন। তিনিই নির্দেশ দেন, পৌষ সংক্রান্তির একদিন আগে গ্রামের মানুষ যেন উত্তরদিকের মাঠে এসে রান্নাবান্না করে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। সেই থেকে এখনও এই প্রথা চলে আসছে।কোশিগ্রামের বাসিন্দা রামচরণ রায়, মাধব মাঝি, সুবিনয় মোদক বলেন, এই বিশেষ দিনে মাঠে এসে রান্না করে আমরা খাওয়াদাওয়া করি। ওই ফকিরবাবার বংশধররা এখনও গ্রামে আসেন। পুজোপাঠের পর মাঠে নিরামিষ ভাত-তরকারি বা খিচুড়ি-মিষ্টি খাওয়া চলে। এই উপলক্ষ্যে গ্রামজুড়ে মেলা বসেছে। ফকিরবাবার আস্তানায় পুজো দেওয়া হয়েছে।যুক্তিবাদীরা জানালেন, এধরনের কাজ কুসংস্কার ছাড়া কিছুই নয়। বরং মাঠে খোলা জায়গায় রান্না করে খাওয়াদাওয়া করলে খাবারে কিছু পড়ে সংক্রমণ হতে পারে।এদিন কাটোয়া-কেতুগ্রাম সড়কের কোশিগ্রাম বাসস্ট্যান্ডের কাছে যেতেই চোখে পড়ল, দু’ধারে মাঠে ছোট ছোট তাঁবু খাটিয়ে বহু মানুষ খিচুড়ি রান্না করছেন। কয়েকটি পরিবার মিলে এক-এক জায়গায় রান্নার আয়োজন চলছে। তবে খাওয়া শুরুর আগে একটি কলাপাতায় খাবার নিয়ে মাঠের এক কোণে পূর্বপুরুষের নামে উৎসর্গ করা হয়। ফকিরবাবার পুজো দিয়ে উৎসব শুরু করেন বাসিন্দারা। পাশের যতীনপুর গ্রামের বাসিন্দারাও এই উৎসবে যোগ দেন। ধীরে ধীরে গ্রামের এই উৎসবের জৌলুস বাড়ছে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)