প্রীতেশ বসু, কলকাতা: নরেন্দ্র মোদির আমলে দেশে বেকারত্বের হার রেকর্ড ছুঁয়েছে। সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার আম জনতা। এই পরিস্থিতিতেও কীভাবে বেকারদের জীবনযুদ্ধের সহায়ক হয়ে উঠতে পারে একটি রাজ্যের সরকার, বারবার তার নজির তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তালিকায় এবার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। নবান্নের সিদ্ধান্ত, ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করতে আর দৌড়তে হবে না ‘শিল্পের সমাধান’ শিবিরে বা কোনও সরকারি অফিসে। শীঘ্রই বাড়ির কাছে মিলবে এই সুবিধা। রাজ্যের প্রত্যেকটি বাংলা সহায়তা কেন্দ্র (বিএসকে) থেকে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে।
যুবক-যুবতীদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করায় উৎসাহ দিতে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড চালু করেছে রাজ্য। এই কার্ড থাকলে ব্যবসার জন্য যে কোনও ব্যাঙ্ক সহজ শর্তে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। ঋণের ‘গ্যারেন্টার’ থাকে রাজ্য সরকারই। এখনও পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি উপভোক্তা এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। তারপরেও রাজ্যের যে কোনও প্রান্তের নাগরিক যাতে সহজে এই কার্ড পেতে পারে, সেই লক্ষ্যে বিএসকে থেকে আবেদনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসের শেষের দিকে রাজ্যের প্রতিটি বিএসকে থেকে এই সুবিধা পাওয়া যাবে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। সংশ্লিষ্ট এক আধিকারিক জানান, ‘শিল্পের সমাধান’ ক্যাম্প বা সংশ্লিষ্ট অফিস ছাড়াও বর্তমানে অনলাইনে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করা যয়। কিন্তু সমস্যা হল, আবেদনের সময় প্রস্তাবিত ব্যবসা সংক্রান্ত একাধিক খুঁটিনাটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। অনেকের পক্ষে এতসব ঝক্কি সামলানো সম্ভব হয় না। ‘শিল্পের সমাধানে’ শিবিরে গেলে আধিকারিকরা সাহায্য করেন। কিন্তু সেই ক্যাম্প বছরে এক-দু’বার হয়। সেই জায়গায় বিএসকে-তে বছরের যে কোনও সময় এই সুবিধা পাবে আম জনতা। বর্তমানে গোটা রাজ্যে ৩৫৬১টি বিএসকে চলছে। নতুন করে আরও ১৪৩১টি চালু হবে বলে খবর। ফলে ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে আর কোনওরকম ঝক্কি সামলাতে হবে না বলেই আশাবাদী প্রশাসনের কর্তারা।
সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকে বিএসকে নিয়ে প্রচার জোরদার করার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রগুলিতে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা মিলছে, আঞ্চলিক ভাষায় তা প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। শুধু তাই নয়, বিএসকে’র মাধ্যমে জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ফি এবং স্ট্যাম্প ডিউটি জমা দেওয়ার সুবিধা চালু হয়েছে রাজ্যে। বর্তমানে যাঁরা অনলাইনে এই টাকা জমা দিতে পারেন না, তাঁদের চালান নিয়ে দৌড়তে হয় ব্যাঙ্কে। সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। বিএসকে-তে এই পরিষেবা চালু হওয়ায় আর কোথাও দৌড়নোর প্রয়োজন পড়ছে না।