• ড্রিল মেশিন দিয়ে রাস্তা খুঁড়ে  তার চুরি শহরে, গ্রেপ্তার ১০
    বর্তমান | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাস্তায় বিএসএনএলের বোর্ড লাগানো। তাতে লেখা ‘ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস’।  টেলিফোন কেবল রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। অসুবিধার জন্য দুঃখিত। রাস্তার একটা অংশ প্লাস্টিকের স্টিক দিয়ে ঘেরা। একদল লোক মাথায় হলুদ টুপি পরে রাস্তা কাটছে। জামার উপরে কমলা রঙের ফ্লুরোসেন্ট জ্যাকেটের পিছনে বড় বড় করে লেখা ‘বিএসএনএল’। জোরকদমে চলছে মাটি খোঁড়ার কাজ। সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে, সরকারি সংস্থাই কাজ করছে। আসলে এরা যে টেলিফোনের কেবল চুরির চক্র, হরিদেবপুর থানায় বিএসএনএল অভিযোগ না করলে তা জানাই যেত না। সরকারি টেলিফোন সংস্থার শ্রমিক সেজে তারা কয়েক লক্ষ টাকার কেবল হাপিস করেছে। হরিয়ানার এটিএম লুটেরা গ্যাংয়ের মতোই ছোট লরিতে এসে তারা এই কাণ্ড করে বেড়াচ্ছিল। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শনিবার গভীর রাতে দশজনকে গ্রেপ্তার করেছে হরিদেবপুর থানা। তাদের কাছ থেকে মাটি কাটার যন্ত্রপাতি সহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে।  চক্রের মূল পান্ডার খোঁজ চলছে।


    শনিবার বিএসএনএলের তরফে হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ করা হয়, তাদের লক্ষাধিক টাকার কেবল চুরি হয়েছে। তাদের নাম করে বোর্ড লাগিয়ে রাস্তা কেটে এই কেবল তুলে নেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে কেস রুজু করে তদন্তে নামে হরিদেবপুর থানা। অফিসাররা জানতে পারেন, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে এই এলাকায়। যে কারণে রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। কোথায় কোথায় রাস্তা কাটা হয়েছে, তা জানতে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় যান অফিসাররা। হঠাৎ তাঁদের নজরে আসে একটি ছোট গাড়ি এসে দাঁড়ায় ওই এলাকায়। বিএসএনএলের কাজের জন্য ব্যবহৃত  লরিতে মাথায় যেমন প্লাস্টিকের আচ্ছাদন থাকে, এই লরিতে সেটি রয়েছে। সামনে লাগানো বিএসএনএলের বোর্ড। সন্দেহ হওয়ায় ওই গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চায় পুলিস। অফিসারদের দেখেই লরিতে ড্রিলিং মেশিন সহ বিভিন্ন সামগ্রী রেখে কয়েকজন দৌড় লাগায়। তখনই তাঁরা নিশ্চিত হন বিএসএনএলের কাজের নাম করে এরা কেবল চুরি করতে এসেছে। তাড়া করে পাঁচজনকে ধরা হয়। তাদের জেরা করে ধরা হয় আরও পাঁচজনকে।


    ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পারে, এরা সকলেই বিহারের  বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। চক্রের কিংপিন বসে রয়েছে বিহারে। বিএসএনএলে কীভাবে কাজ হয়, তা দলের পান্ডা জানত। সেইমতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টেলিফোনের কেবল চুরির কাজে নামার প্ল্যান কষা হয়। কেবলের মধ্যে থাকা তামার তার মোটা দামে বিক্রি করাই ছিল উদ্দেশ্য। সেইমতো বিভিন্ন জেলা থেকে লোক জোগাড় করা হয়। সকলকে বলা হয় বিএসএনএলের কাজের বরাত পাওয়া গিয়েছে। তাদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো হবে। পুলিসকে অভিযুক্তরা জানিয়েছে, তাদের কয়েকদিন আগে কলকাতায় আনা হয়। হরিদেবপুরে বিভিন্ন এলাকায় তাদের দিয়ে রাস্তা কাটিয়ে কেবল তোলানো হয় বলে অভিযোগ। রাস্তা কাটার যন্ত্রপাতি বিহার থেকে আনা হয়েছিল। কলকাতা থেকে লরি ভাড়া নেওয়া হয় চুরির মাল সরানোর জন্য। সেখান থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, বিহারের কিংপিনের সঙ্গে শহরেরও কেউ রয়েছে, যে কলকাতার কোন কোন রাস্তা খোঁড়া হবে তা দেখাচ্ছে এবং গাড়ি ভাড়া সহ অন্য সাপোর্ট দিচ্ছে। সেইমতো রাতে বিএসএনএলের নামে বোর্ড লাগিয়ে রাস্তা খুঁড়ে ফেলছে শ্রমিকরা। ধৃতদের মোবাইলের কল ডিটেইলস ঘেঁটে চক্রের পান্ডা ও তার শাগরেদদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)