• মুনাফা বেশি ও ঝক্কিও কম, শিশু পাচারে লেনদেন তাই নগদেই
    এই সময় | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: শিশু পাচারের ঘটনায় বেশির ভাগ লেনদেন হয়েছে নগদে, তেমনটাই দাবি সিআইডি–র। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, কখনও সাত লক্ষ টাকা, কখনও বা তার বেশি টাকায় শিশুদের বিক্রি করা হয়েছে বেশ কয়েক জন দম্পতির কাছে। এক–এক দম্পতির জন্য এক–এক রকম রেট। দর হাঁকা হতো নিঃসন্তান দম্পতিদের আর্থিক অবস্থা দেখে। তা ছাড়া, শিশুপুত্র এবং শিশুকন্যার রেট আলাদা। যে দামে শিশুদের কেনা হতো তাদের মা–বাবার কাছ থেকে, তার প্রায় চার গুণ দামে শিশুদের বিক্রি করা হতো বলে সিআইডি–র তদন্তে উঠে এসেছে।

    শিশু পাচারের ওই চক্রে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছ’জনকে। চক্রের বাকি পান্ডা ও এজেন্টদের খোঁজ করছে সিআইডি।

    সিআইডি সূত্রের খবর, শিশু পাচার চক্রে ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, এই কারবারে নগদে লেনদেনে মুনাফা অনেক বেশি। তার কারণ, নগদে কেনাবেচা হলে কর এবং অন্যান্য খরচ এড়ানো যায়। একই সঙ্গে নথিপত্রে কিছুর উল্লেখ না–থাকায় অসাধু কারবার চাপা দেওয়াও সুবিধেজনক। চক্রের পান্ডারা হতদরিদ্র কোনও দম্পতির কাছ থেকে যে টাকা দিয়ে একটি শিশুকে কিনত, তার চেয়ে কিছুটা বেশি দামে চাঁইদের কাছ থেকে শিশুদের কিনত চক্রের মিডলম্যান এবং নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে যে দামে শিশুটিকে মিডলম্যান বিক্রি করত, টাকার সেই অঙ্কটা প্রায় তিন–চারগুণ বেশি— প্রথম যখন শিশুটিকে কেনা হয়েছিল, সেই দামের চেয়ে।

    নিঃসন্তান দম্পতিদের অনেকে মনে করেন, আইনি জটিলতা এড়াতে নগদ টাকা দিয়েই শিশু কেনায় সুবিধে। কিন্তু শিক্ষিত ও সচেতন নিঃসন্তান দম্পতিরা এ ভাবে শিশু কিনতে কেন রাজি হতেন, সেই প্রশ্ন গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে।

    শিশু পাচার চক্রে প্রধান অভিযুক্ত, বেহালার দম্পতি মানিক হালদার ও তার স্ত্রী মুকুল সরকারকে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি। তার পর গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের মিডলম্যান জ্যোৎস্না মণ্ডল এবং একটি নাসিংহোমের কর্মী সৌরভ অধিকারীকে। সম্প্রতি নাগেরবাজারের দম্পতি, শিশুর ক্রেতা বিজয় সান্থালিয়া ও তাঁর স্ত্রী নেহা সান্থালিয়াকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

    গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ধৃতদের জেরা করে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে যে, বিহারের গয়া থেকে এজেন্ট মারফত একটি শিশুকে মানিক ও মুকুল এখানে নিয়ে আসার পর তাকে দেড়–দু’লক্ষ টাকার বিনিময়ে তুলে দেওয়া হয় মিডলম্যান জ্যোৎস্নার হাতে। সেই লেনদেন নগদে হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তার পর জ্যোৎস্নার কাছ থেকে থেকে বিজয় ও নেহা সান্থালিয়া সাত লক্ষ টাকায় শিশুটিকে কিনেছিল।

    সিআইডি–র বক্তব্য, সেই লেনদে‍নও হয়েছিল নগদে। নাগেরবাজারের ধৃত সান্থালিয়া দম্পতিকে জেরা করে জানা গিয়েছে, আইনি জটিলতা এড়াতে এবং শিশুটিকে সহজে ও তাড়াতাড়ি পেতে তারা নগদ টাকা দিয়েছিল।

    সিআইডি সূত্রের খবর, চক্র মারফত শিশুপুত্র ও শিশুকন্যা বিক্রির ‘রেট চার্ট’ ছিল আলাদা। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, মূলত বিহারের মুজফ্ফরপুর, পাটনা ও গয়া থেকে এ রাজ্যে শিশুদের নিয়ে আসা হয়েছে। তা ছাড়াও, চক্রের টার্গেট থাকত, ভারতের অন্য কয়েকটি রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামের হতদরিদ্র দম্পতিরা। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই শিশু পাচার চক্রের জাল ছড়িয়ে।

    সেখানকার বহু গরিব ঘর থেকে শিশুদের টাকা দিয়ে কিনে আনত মানিক–মুকুলের এজেন্টরা। তার পর সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে গ্রুপ তৈরি করে সেখানে নিঃসন্তান দম্পতিদের টোপ দিয়ে অথবা বাড়ির কাছের কোনও নার্সিংহোমের পরিচিত কর্মী বা মিডলম্যানের মাধ্যমে নিঃসন্তান দম্পতিকে, বিশেষ করে স্বচ্ছল দম্পতিকে শিশু পাচার চক্রের পান্ডারা টার্গেট করত।

  • Link to this news (এই সময়)