এই সময়: উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতায় নামা ছাত্রের আচমকা মৃত্যুর নেপথ্যে কি রয়েছে ধরা না-পড়া কোনও জন্মগত হৃদরোগ? ময়নাতদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হবে ঠিকই।
কিন্তু ঘটনার বিবরণ শুনে চিকিৎসকদের অনেকেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, সাধারণত আন-ডায়াগনোজ়ড কনজেনিটাল হার্ট ডিজ়িজ় থেকেই এমনটা হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তাই যে সব স্পোর্টসে বাড়াবাড়ি রকমের দম, ধকল ও শারীরিক কসরতের প্রয়োজন, সেই সব খেলায় নামার আগে কম বয়সেও হার্ট চেক-আপ করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাঁতার, ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল, ভলিবল, অ্যাথলেটিক্সের ক্ষেত্রে যে শারীরিক কসরত বেশি হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চিকিৎসকরা মনে করেন, যাঁদের হার্টে গোলমাল রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে আচমকাই এই সব ধকলে হৃদযন্ত্র থমকে গিয়ে আকস্মিক মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। ঠিক যেমন পাইকপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের তরুণ ক্রিকেটার অনিকেত শর্মার মৃত্যু হয়েছিল ২০১৯-এ। আবার ২০২৩-এ খেলতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল নয়ডার স্কুলপড়ুয়া ক্লাস এইটের রোহিত সিং। গত বছর জানুয়ারিতে একই ভাবে খেলতে গিয়ে মৃত্যু হয় মধ্যপ্রদেশের অষ্টাদশী রোজ়া লোধির। আর গত ৭ জানুয়ারি খেলার সময়ে মারা যায় কর্নাটকের ৮ বছরের তেজস্বিনী।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ধীমান কাহালি মনে করেন, ‘এমন ঘটনার নেপথ্যে মূলত চারটি কারণ থাকতে পারে। এগুলি সবই হার্টের অসুখ, যেগুলি আগে ধরা পড়েনি।’ তিনি জানান, প্রথম কারণ হলো, অ্যারিথমিয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন। দ্বিতীয় কারণ হলো, হাইপারট্রফিক অবস্ট্রাক্টিভ কার্ডিয়ো-মায়োপ্যাথি (এইচওসিএম)। এতে হার্টের প্রকোষ্ঠগুলোর দেওয়াল এবং পেশিগুলো মোটা ও পুরু হয়ে যায়। ফলে হার্টের বাঁ অলিন্দ যে রক্তটা পাম্প করে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়, সেটা পর্যাপ্ত হয় না। কারণ, রক্ত চলাচলের ভিতরের রাস্তাটা (ল্যুমেন) সরু হয়ে যায় ও বাধা সৃষ্টি করে। ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সোমনাথ দাসেরও ব্যাখ্যা, ‘এমন ধরনের ঘটনায় যতগুলি ময়নাতদন্ত করেছি, প্রায় সবক’টি ক্ষেত্রেই দেখেছি, মৃতের এইচওসিএম ছিল।’
কাহালি জানাচ্ছেন, কম বয়সে এমন আচমকা হৃদরোগে মৃত্যুর তৃতীয় কারণ হতে পারে ডায়ালেটেড কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি। যাতে হার্টের েপশিগুলো দুর্বল হয়ে গিয়ে হৃদযন্ত্রটি ফুলে বড় হয়ে যায়। এতেও আচমকা হার্ট স্তব্ধ হয়ে পড়তে পারে বাড়াবাড়ি ধকলের ক্ষেত্রে। আর চতুর্থত, করোনারি আর্টারি ডিজ়িজ়। সাধারণত ছোট থেকেই কারও কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে হৃদধমনি ব্লক হয়ে গিয়ে এমনটা হয়। তাঁর কথায়, ‘কম বয়সে, বিশেষ করে প্রচুর শারীরিক কসরতযুক্ত স্পোর্টসে নামার আগে একটা কার্ডিয়ো চেক-আপ হওয়া উচিত। ইসিজি, ইকো ইত্যাদি পরীক্ষাতেই এ সব সমস্যা সহজে ধরা পড়ে যায়। রোগ চিহ্নিত হলে এমন খেলাধুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।’
আবার সোমনাথ দাস জানাচ্ছেন, এইচওসিএম-এর নজিরই বাস্তবে বেশি দেখা যায় এমন সব সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের নেপথ্যে। কোনও পূর্বাভাস ছাড়াই মারাত্মক ধকলের ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের জেরে হঠাৎ থেমে যায় হার্ট। তাঁর কথায়, ‘মাত্রাতিরিক্ত ধকলের সময়ে যে হেতু বেশি রক্তের চাহিদা থাকে শরীরজুড়ে, তাই সে সময়ে হার্ট একটুতেই কাহিল হয়ে পড়ে বিকল হয়ে বসে। রক্ত চলাচল অলিন্দের দরজায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। আবার খেলতে গিয়ে বড়সড় ধাক্কা লাগলেও ভেগাস নার্ভ আচমকা উদ্দীপনার বশবর্তী হয়ে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে এবং হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোগটা জানা থাকলে, হার্ডকোর ফিজ়িক্যাল অ্যাক্টিভিটি থেকে বিরত থাকাই ভালো।’