মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মৃত্যু হয় মামনি রুইদাসের। প্রসূতি মৃত্যুতে কাঠগড়ায় ব্ল্যাক লিস্টেড সংস্থার সরবরাহ করা স্যালাইন। এ নিয়ে এই মুহূর্তে রাজ্যে তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে মামনির সেই সদ্যোজাত পুত্রসন্তানকে ভর্তি করানো হলো মেদিনীপুর মেডিক্যালে। পরিবারের দাবি, হঠাৎই একরত্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঠান্ডা লেগে থাকতে পারে। সোমবার সকাল থেকেই জ্বর জ্বর ভাব। গায়ের রং হলদেটে দেখাচ্ছে বলে দাবি পরিবারের।
প্রস্রাবের রংও হলদেটে। এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ছোট্ট অনুপকে। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ডাক্তাররা জানিয়েছেন, রিপোর্ট এলে সবটা জানা যাবে।
মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী বলেন, ‘মামনির সন্তান আজ এসেছে। ডিহাইড্রেশন আছে বলে ওকে ভর্তি করিয়েছি আমরা। পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে। খুব গুরুতর কিছু না। খাওয়াদাওয়া করছে, অ্যাক্টিভিটিও ঠিক আছে।’
৮ জানুয়ারি সকালে প্রসূতি মামনি রুইদাসকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সে দিন রাতেই সন্তানের জন্ম দেন তিনি। আর ১০ জানুয়ারি, শুক্রবার ভোরে ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন মৃত্যু হয় মামনির। মামনির স্বামী দেবাশিস রুইদাস এ দিন স্ত্রী বিয়োগের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘বারবার মনে পড়ছে, হাসপাতালে যাওয়ার জন্য নিশ্চয়যানে উঠতে উঠতেও মামনি বলেছিলেন, দিদির কোলে এ বার ভাই খেলবে।’ দেবাশিসের আফশোস, মেয়ের পর ছেলে এলো ঘরে, কিন্তু সেই সুখ দেখার জন্য স্ত্রী-ই আর রইলেন না।
মেয়ে অনুর জন্মের চার বছর পর ছেলের জন্ম। মামনি বলেছিলেন, ছেলের নাম রাখবেন অনুপ। স্ত্রীর সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন স্বামী। দেবাশিসের দুঃখ, ‘আমার মেয়েও সিজার করেই হয়েছিল। তখন এইসব ভেজাল জিনিসপত্র ছিলো না। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল।’
মা নেই। ৬ দিনের শিশু এখন প্যাকেটের দুধে বাঁচছে। ডাক্তার প্যাকেট দুধ লিখে দিয়েছেন। ঠাকুমা কল্পনা রুইদাস সেই দুধ বোতলে গুলে খাওয়াচ্ছিলেন। তবে সোমবার থেকে শরীরটা বিশেষ ভালো না হওয়ায়, অনুপকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।
দেবাশিস খুব কষ্ট করে সংসার টানেন। দিনমজুরি করে দিনে ১৫০-২০০ টাকা আয়। তবে কাজ হলে টাকা, না হলে হাত ফাঁকা। দেবাশিস ভাবছেন, মামনি সেই অভাবও ঠিক সামলে নিতেন অক্লেশে। এ বার কী হবে? ছোট ছোট দুটো মা-হারা ছেলেমেয়ে, কী ভাবে সবটা সামলাবেন তিনি?