মায়ের হাত ধরে দীর্ঘ সাত বছর পরে উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের বন্দিজীবন থেকে বাড়ি ফিরেছে মেয়ে। ১৭-র সেই কিশোরী এখনও চিকিৎসাধীন। উত্তর ২৪ পরগনার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি), সমাজকর্মী ও বারাসত পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার হস্তক্ষেপে এক দিন আগে হয়েছে তার মেডিকো–লিগ্যাল টেস্ট।
হাসপাতালে এই প্রতিবেদককে দেখে মুখে এক চিলতে হাসি দেখা গেল সেই মীনার (নাম পরিবর্তিত)। সে হাসিতে কষ্ট নেই। স্বস্তি আছে। ‘শ্বশুরবাড়িতে’ টানা অত্যাচারে শরীর শুকিয়ে গেলেও মুখে খানিক হাসি ফিরেছে। সাত বছর ধরে অপুষ্টিতেও জর্জরিত মীনার স্বাস্থ্য ফেরাতে চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।
তারপরেও তার মা আমিনার (নাম পরিবর্তিত) চোখে-মুখে উদ্বেগ। কারণ, পুলিশি তদন্ত এখনও ঠিক মতো শুরু হয়নি। বারাসত পুলিশ জেলার শাসন থানা জ়িরো এফআইআর করে আলিগড় থানায় পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দিক থেকে এখনও কোনও উচ্চবাচ্য নেই।
আমিনার উদ্বেগের প্রধান কারণ পরিবারের আর্থিক অবস্থা। দ্বিতীয়, মেয়ের নামে যে ভুয়ো ভোটার ও আধার কার্ড তৈরি করা হয়েছিল, তাতে জন্মতারিখ পাল্টে ফেলা হয়েছে। ফলে আলিগড়ে যে জোর করে ওই নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটা প্রমাণ হবে কী করে? মীনা-র নামও কেন সব সরকারি নথিতে পাল্টে দেওয়া হয়েছিল, সে প্রশ্নেরও কোনও উত্তর মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘এখন ভুয়ো পাসপোর্ট, আধার, ভোটার কার্ড নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ঝামেলার পরিপ্রেক্ষিতে চর্চা হচ্ছে, ধরপাকড় চলছে। কিন্তু পাচারকারীরা গত ১৫ বছর ধরে এই কারবারে অভ্যস্ত। মীনার সঙ্গেও হয়তো তা-ই হয়েছে।’
আমিনা বলছেন, তাঁর মেয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও তাঁর কাছেই থাকবে। তবে তিনি চিন্তিত এই কেসের পরিণতি নিয়ে। তাঁর কথায়, 'যদি বিচার না পাই, সোনু (উত্তরপ্রদেশে যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল) আর পাচারকারীদের যদি চরম শাস্তি না হয়, তা হলে আমি এই মেয়েকে নিয়েই আত্মহত্যা করব।'
বারাসত জেলা পুলিশের এসপি প্রতীক্ষা ঝারখরিয়ার কথায়, ‘ঘটনাস্থল (প্লেস অফ অকারেন্স) যে হেতু আলিগড় ও মেয়েটিকে উদ্ধারও করা হয়েছে সেখান থেকে, তাই এফআইআর সে-ই থানায় পাঠানো হয়েছে। তবে মেয়েটির পরিবার থেকে পাচারের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা নিয়ে এখান থেকেও তদন্ত চলছে।’
তিনি মনে করছেন, মীনাকে তার যে প্রতিবেশী মহিলা আলিগড়ে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ, সে সম্ভবত আন্তঃরাজ্য ট্র্যাফিকিং র্যাকেটের সঙ্গে যুক্ত। দিল্লিতে পার্লার ব্যবসার নামে মেয়েদের সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন করায় বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। আমিনার সাহসে মীনাও এখন আত্মবিশ্বাসী। মীনা জানিয়েছে, পড়াশোনা শিখে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ছেলেকে সে ফিরিয়ে আনবে সে।