• শুধু পিজিটি-ইন্টার্ন দিয়েই সিজ়ার? প্রসূতির পরিবারকে দিয়ে মুচলেকা, মেদিনীপুর মেডিক্যালের ঘটনায় বাড়ছে রহস্য
    এই সময় | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগ তো বটেই, মেডিসিন এবং জেনারেল সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন বহু রোগীকেই দেওয়া হয়েছিল রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (আরএল) স্যালাইন। এটা স্পষ্ট, ওই স্যলাইন কালো তালিকাভুক্ত সংস্থার সরবরাহ করা। কিন্তু ওই স্যালাইন দেওয়ায় কেন পাঁচ প্রসূতিই কেবল অসুস্থ হলেন, একজন মারা গেলেন— সে প্রশ্নর উত্তর খুঁজছে তদন্তকারী দল। তবে গোটা বিষয়টিতে যে একাধিক অনিয়ম হয়েছে তা যত সময় যাচ্ছে পরিষ্কার হচ্ছে। প্রসূতিদের পরিবারের লোকজনকে দিয়ে মুচলেকা লেখানো নিয়েও নতুন করে রহস্য বেড়েছে। মুচলেকার বিষয়টি ‘এই সময় অনলাইন’-এর কাছে মেনে নিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও। পাশাপাশি গোটা ঘটনায় চিকিৎসার গাফিলতিও যে ছিল তা তদন্তে প্রাথমিকভাবে উঠে আসছে। তবে এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মন্তব্য করতে চাননি হাসপাতালের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী।

    একটি সূত্রে খবর, প্রসূতিদের পরিবারের লোকজনকে দিয়ে লেখানো হয়েছিল মুচলেকা। ‘...সব কিছুই জেনেও চিকিৎসার অনুমতি দিলাম’। এই বয়ানের নীচে লেখা ছিল স্যালাইনের ব্যাচ নম্বর। অনুমান, পরিবারকে দিয়ে এই মুচলেকা প্রসবের পরে সই করানো হয়েছিল। এমন নজির নেই বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। পাশাপাশি ওই পাঁচ প্রসূতির সিজার বা অস্ত্রোপচার করেছে একটিই ইউনিট। ওই ইউনিটের হেড অর্থাৎ সিনিয়র চিকিৎসক বা RMO সে দিন অনুপস্থিত ছিলেন। ছিলেন, তিনজন পিজিটি, একজন ইন্টার্ন-সহ প্রয়োজনীয় আরও কয়েকজন। হাসপাতালের একটি সূত্রে খবর, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল প্রত্যেকেরই। জেলার এক স্বাস্থ কর্তা বলছেন, ‘চিকিৎসায় ত্রুটির জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। আরএল খুব বড় ফ্যাক্টর এখানে নয়। প্রতি পদে অনিয়ম হয়েছে। নার্সরা বিষয়টি জানেন। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, আরএল থেকেও চিকিৎসায় গাফিলতি প্রসূতি মৃত্যুর বিষয়টি প্রশস্ত করেছে।’

    এই গোটা বিষয় নিয়ে ‘এই সময় অনলাইন’-এ মুখ খুলেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক এরকম মুচলেকা লেখানো হয়েছিল। যা সম্পূর্ণ গর্হিত ব্যাপার, ওই আরএলে কিছু সমস্যা হতে পারে সেটা কেউ জানলই বা কী করে! যথেষ্ট সন্দেহর। এরকম মুচলেকা লেখানো আগে দেখিনি। রাজ্যের তদন্ত কমিটি নিশ্চয়ই এ ব্যাপারেও রিপোর্টও দেবে। এই গোটা ঘটনাই দুঃখজনক।’ তবে চিকিৎসার গাফিলতি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

    প্রসূতিদের পরিজনদেরও অভিযোগ, সে দিন সিজারের পুরো বিষয়টি পরিচালিত হয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের মাধ্যমে। একজনও সিনিয়র চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না ওই সময়ে। হাসপাতালের এক আধিকারিক মানছেন, ‘তদন্তকারী দল সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য নথিপত্র নিয়ে গিয়েছেন।’ জানা গিয়েছে, ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির দলের কাছেও এমন বিষয়গুলি উঠে এসেছে। তাঁরা সবদিক খতিয়ে দেখছে।

    অন্যদিকে, সোমবার বাইরে থেকে আরএল স্যালাইন-সহ বিভিন্ন ওষুধপত্র কিনতে হচ্ছে রোগীর পরিজনদের। এ নিয়েও মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনও বিবৃতি না পাওয়া গেলেও, জেলার স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘খুব দ্রুত অন্য কোনও সংস্থার আরএল সাপ্লাই করা হবে। আপাতত কিছু ক্ষেত্রে বাইরে থেকে আরএল কিনতে বলা হচ্ছে।’

    প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গত বুধবার, ৬ জানুয়ারি রাতে সিজ়ার হওয়া ৫ জন প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের স্থানান্তরিত করা হয় ICU-তে।  শুক্রবার ভোরে মামনি রুইদাস নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি গড়বেতা থানা এলাকায়। মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইনের দিকেই অভিযোগ তুলেছিলেন প্রসূতির পরিবারের সদস্যরা। এরপরেই ঘটনার প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছিল। ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন হয়েছে। আর সেখানে পদে পদে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর নানা অভিযোগ।

    তথ্য সহায়তা: মণিরাজ ঘোষ

  • Link to this news (এই সময়)