• হাঁড়ি–কড়াই ভাড়া নিয়ে উধাও চার যুবক
    এই সময় | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, কোচবিহার: কখনও মিস্‌ড কল, কখনও বা হাতসাফাই করে প্রতারণার কথা অনেক শোনা যায়। তাই বলে হাঁড়ি–কড়াই ‘সাফাই’। বছরের শেষ। সকাল থেকেই ভিড় কোচবিহার শহরের দেশবন্ধু মার্কেটে ডেকরেটার দোকানে। কেউ ছোট ম্যাটাডোর, কেউ টোটো এনে নিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় হাড়ি–কড়াই–হাতা–খুন্তি–গ্যাস ওভেন–জলের মগ এমনকী প্লাস্টিকের চেয়ার।

    শহরের কাছে হাজরাপাড়া থেকে চার যুবক এসে বলেন, ‘দাদা, পিকনিক করব। কড়াই, হাতা, খুন্তি, গ্যাস ওভেন লাগবে।’ হিসেব করে পাঁচশো টাকা ভাড়া লাগবে বলে জানান এক ডেকরেটর ব্যবসায়ী বিজয় সাহা। ফোন নম্বর, অগ্রিম হিসেবে দু’শো টাকা জমা রেখে দেন তিনি। সাধারণত দু’–তিন দিনের মধ্যে বাসনপত্র ফেরত দিয়ে দেন সকলে। কিন্তু ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও দেখা নেই তাঁদের। এ দিকে দোকানে বাসনপত্র ফেরত না আসায় চিন্তায় পড়েন বিজয়।

    খাতায় লেখা নম্বরে ফোন করলে উল্টো দিক থেকে জানানো হয়, এটা কোচবিহার শহরের হাজরাপাড়া নয় ফুলবাড়ি এলাকা। তিনি মনে করেন, হয়তো ফোন নম্বর লিখতে ভুল হতে পারে। একটি টোটো ভাড়া করে দোকান থেকে খাতায় লেখা ঠিকানায় চলে যান তিনি। সেখানেও খোঁজখবর করার পরে সে রকম কাউকে পাওয়া যায়নি। বুঝতে পারেন, বাসনপত্র নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে উঠতি যুবকরা। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার টাকার এই বাসনপত্র নিয়েও এখন জালিয়াতি হচ্ছে। এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে কোচবিহারের ডেকরেটার্স মহলে। এই পরিস্থিতিতে অচেনা মানুষকে এখন বাসনপত্র–সহ অন্য ডেকরেটার্স সামগ্রী দিতে চিন্তায় পড়েছেন তারা।

    কোচবিহার শহরের দেশবন্ধু মার্কেটে বাসনপত্র ভাড়া দেওয়ার বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চার যুবক এসেছিলেন বাসন ভাড়া নিতে। বছর শেষে আগের দিনে আরও অনেকেই বাসনপত্র ভাড়া নিতে এসেছিল। ভিড় ছিল বেশ ভালই। তারাও রান্নাবান্না করার জন্য দু’টো কড়াই, একটি গামলা, দুটো হাতা, দুটো খুন্তি–সহ অন্য সামগ্রী নিয়ে যায়। রীতিমতো টোটোতে চাপিয়ে আর পাঁচ জনের মতোই বাসনপত্র নিয়ে যায় তাঁরা। কোচবিহার শহরের হাজরাপাড়া এলাকায় তাঁদের বাড়ি বলে ঠিকানা দেওয়া হয়। ৩১ ডিসেম্বর তাঁরা বাইরে গিয়ে পিকনিক করবে। পয়লা জানুয়ারি সমস্ত বাসনপত্র ফেরত দিয়ে যাবে এমনটা বলে একটি ফোন নম্বরও দেয় তাঁরা।

    এমনকী ওই বাসন ভাড়ার জন্য ৩০০ টাকাও বকেয়া রাখে। নিয়ম মেনে সবই খাতায় লিখে রাখেন ওই ব্যবসায়ী। এক দিন, দু’দিন, চার দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে টনক নড়ে। প্রতারিত হওয়া বিজয় সাহা নামে ওই ব্যবসায়ী জানিয়েন, ৪০ বছর ধরে এখানে দোকান রয়েছে। আগে পিকনিকের জন্য বাসনপত্র নিলে দু’তিন দিনের মধ্যেই তা ফেরত চলে আসত। হয়তো কোনও সময় একটা, দুটো হাতা–খুন্তি হারিয়ে যেত বলে অনেকেই বাসনপত্র জমা দিতে এসে জানাত। তবে এ বার যেটা হয়েছে তা আগে কখনও হয়নি। ফোন নম্বর যখন লেখা হয়েছিল, চেক করে নেওয়া উচিত ছিল।’ কোচবিহার জেলা ডেকরেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল চক্রবর্তী বলেন, ‘যা পরিস্থিতি এ বার থেকে অচেনা কোনও টিম, লোকজন দোকানে এলে তাঁদের পরিচয় পত্র নিয়ে রাখতে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)