• ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা খুনে পুলিশের জালে 'ভূত'! সিটের হাতে নতুন তথ্য...
    আজকাল | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: তার ডাকনাম 'ভূত'। এক জায়গায় কখনও তাকে দীর্ঘক্ষণ দেখা যায় না। ভূতের মতোই চোখের পলকে সে অবস্থান বদল করে। কখনও শিয়ালদহ রেল স্টেশন, তো পরক্ষণেই হাওড়া ময়দানের বাস স্ট্যান্ড। প্রয়োজন মতো চেহারায় বদলও এনেছিল। কিন্তু পুলিশের দক্ষতার কাছে তার সব জারিজুরি খতম। ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা অশোক সাউ খুনের অন্যতম অভিযুক্ত ভূত ওরফে সুমিত পাশওয়ানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল। সোমবার সকালে ব্যারাকপুরের জগদ্দল রেল স্টেশন চত্বর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করল। সব মিলিয়ে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত মোট সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

    গত ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন তৃণমূল নেতা অশোক সাউ। তিনি ভাটপাড়া পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দলের প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন। অশোক সেদিন বাড়ির অদূরে একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। দুষ্কৃতীরা অতর্কিত সেখানে তাকে গুলি করে খুন করে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া নিজে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের ধরতে তৎপর হয়ে ওঠেন। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট সিট গঠন করে।ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাস সিটের দায়িত্বে রয়েছেন । 

    সিটের আধিকারিকরা ঘটনার তদন্ত নেমে জানতে পারে, ২০২০ সালে ভাটপাড়ার পালঘাট রোডে আকাশ সাউ নামে এক সমাজবিরোধীকে পিটিয়ে মারা হয়। সে ছিল মাদক পাচারের চাঁই। তার বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি ও রাহাজানি-সহ আরও বেশ কিছু অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। ‌ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন তৃণমূল নেতা অশোক। অভিযোগ, দাদার খুনের বদলা নিতে নিহত আকাশের দাদা সুজল সাউ ২০২৩ সালে অশোককে একবার খুনের চেষ্টা করে। যদিও বরাত জোরে সেবার তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু সুজল অশোকের পিছু ছাড়েনি। চায়ের দোকানে ঢুকে দুষ্কৃতীয়া তাঁকে গুলি করে খুন করে। নিহত অশোকের পরিবারের পক্ষ থেকে জগদ্দল থানায় সুজল-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্ত নেমে ঘটনার পরের দিন পুলিশ কাউসার আলি নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে। কাউসারকে জেরা করে পুলিশ তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় সুজন পাশোয়ানের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে। ১৬ নভেম্বর ভোররাতে টিটাগড়ের এক গোপন ডেরা থেকে পুলিশ সুজনকে গ্রেপ্তার করে। 

    ধৃত কাউসার ও সুজনকে জেরা করে পুলিশ তৃণমূল নেতা খুনের মূল অভিযুক্ত সুজল সাউয়ের অবস্থান জানতে পারে। রাজ্য পুলিশের এডিজি সিআইডি বিশাল গর্গ ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে মূল অভিযুক্ত সুজল সাউকে ধরতে বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়। সেইমতো ১৮ নভেম্বর ভোররাতে বিহারের গোপন এক ডেরা থেকে সুজলকে পুলিশ পাকড়াও করে। সঙ্গে আরও এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ পাকড়াও করে। ধৃতরা এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। তাদের জেরা করে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় অজয় পাশোয়ানের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে। সিটের তদন্তকারীরা বিহারের গোপালগঞ্জের এক ডেরা থেকে পুলিশ অজয়কে পাকড়াও করে। ধৃতদের জেরা করে সিটের আধিকারিকরা ওই খুনের ঘটনায় ভূতের জড়িত থাকার কথা জানতে পারেন। 

    গত দু'মাসে ভূত বেশ কয়েকবার বাড়িতে ফিরেছে। মায়ের সঙ্গে দেখা করেছে। কিন্তু পুলিশ পৌঁছনোর আগেই তড়িৎ বেগে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছে। রবিবার রাতে পুলিশের কাছে খবর আসে, ভূত জগদ্দলে ঢুকেছে। সেইমতো সাদা পোশাকের পুলিশ চারদিকে ফাঁদ পেতে রাখে। কিন্তু ভূতকে ধরতে পারেনি। ভোররাতে ট্রেন ধরে ভূত শিয়ালদহ দিকে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছিল। স্টেশন চত্বর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
  • Link to this news (আজকাল)