মনোরঞ্জন মিশ্র: আধুনিকতার ছোঁয়ায় জৌলুস হারাচ্ছে জঙ্গলমহলের পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী টুস উৎসবে। রাত পোহালেই মকর সংক্রান্তি উৎসব। ওইদিন পালিত হয় টুসু উৎসব। এই উৎসবে অন্যতম চাহিদা হল চৌডল। বাঁশ, কাঠ, রং-বেরঙের কাগজ, প্লাস্টিক, আঠা, পুতুল দিয়ে প্রাসাদের আকারে তৈরি করা হয় চৌডল। ৩ ফুট থেকে ১৫ ফুট উচ্চতা অবধি তৈরি করা হয় এটি। গ্রামবাংলার মেয়েরা এক মাস ধরে টুসু গান গেয়ে টুসু মায়ের আরাধনা করেন। মকর সংক্রান্তির দিন চৌডল নিয়ে নদীতে, পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয় টুসু মাকে। সেই দিন বিশালকার মেলার আয়োজন হয়ে থাকে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন নদীঘাট পুকুরপাড়ে।
পুরুলিয়ার ঝালদার খাটজুরি গ্রাম চৌডল তৈরির গ্রাম হিসেবে বিখ্যাত। একটা সময় গ্রামের প্রায় প্রত্যেকটি পরিবার চৌডল তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে চলত এই চৌডল তৈরির কাজ। মাসের শেষে আয়ও হত অনেক।
একটা সময়ে সারা মাস ধরে চলত এই চৌডল কেনাকাটা। চাহিদাও থাকত প্রচুর। গড়ে ৫ ফুটের চৌডল ৩-৪ হাজার টাকায় বিক্রি হত। চাহিদার অভাবে দাম কমেছে চৌডলের। মাত্র ১২০০-১৫০০ টাকায় চৌডল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন শিল্পীরা। একদিকে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম, অন্যদিকে চাহিদার অভাবে দাম কমছে চৌডলের। মাসের রোজগারটুকুও জোটাতে হিমসিম খাচ্ছেন চৌডলশিল্পীরা।
কিন্তু এখন সেদিন আর নেই! বর্তমান পরিস্থিতি চৌডলের কদর কমেছে অনেকটাই। নতুন প্রজন্ম টুসু উৎসবে সেই অর্থে আর সামিল হয় না। আর এর জন্যই চাহিদা কমেছে চৌডলেরও। তাই ধীরে ধীরে চৌডল ব্যবসা ছেড়ে ভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছেন এঁদের অনেকেই।
বর্তমানে এই গ্রামে বাংলার এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ৩-৪ টি পরিবারই চৌডল তৈরির সঙ্গে কোনও ক্রমে যুক্ত। আগামীদিনে তাঁরা এই শিল্পকে ধরে রাখতে পারবেন কি না, সেই চিন্তায় রয়েছেন শিল্পীরা। তাহলে কি অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী চৌডল-শিল্প?