‘মানসিক নির্যাতন’ চালায় বেসরকারি স্কুলগুলি, নব নালন্দার ঘটনায় গর্জে উঠল গার্ডিয়ানস অ্যাসোসিয়েশন। নব নালন্দায় স্কুলের প্রার্থনা চলাকালীন জানালার কাচ ভেঙে আহত হয় দুই ছাত্র। একজনের আঘাত এতটাই গুরুতর যে, তাকে আরজি করের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করাতে হয়। এখন সেখানেই ভর্তি সে। তাঁর মাথায় ৫টি ও ঘাড়ে ২টি সেলাই পড়েছে। এই ঘটনা আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল বেসরকারি স্কুলগুলির নিরাপত্তা নিয়ে। প্রশ্ন তুলছে ইউনাইটেড গার্ডিয়ানস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক এই সময় অনলাইনকে বলেছেন, বেসরকারি স্কুলগুলির একটি বড় অংশ রীতিমতো নির্যাতন চালায়।
কী নির্যাতন? ইউনাইটেড গার্ডিয়ানস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘খুব খারাপ অবস্থা স্কুলগুলির। অনেক কিছুই ঘটে, যা সামনেই আসে না। অভিভাবকদের সঙ্গে যে কী খারাপ ব্যবহার করা হয়, এক প্রকার মানসিক নির্যাতনের সমান।’
সুপ্রিয়বাবু জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ ভুলে যান, অভিভাবকরা স্কুলেরই পড়ুয়াদের বাবা-মা। শিক্ষার অঙ্গনে মানবিকতার পাঠও তো শেখাতে হবে। সেখান থেকেই তো এক জন ছাত্র তার মানবিক আচরণ শিখবে। অথচ বেসরকারি স্কুলগুলিতে তার বালাই নেই বলে দাবি অভিভাবকদের সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকের।
‘এগুলি শিক্ষাঙ্গন নয়, ব্যবসায়িক অঙ্গন। খালি টাকাটাই এখানে শেষ কথা’, মত সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের। উদাহরণ হিসাবে তিনি কোভিড পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। জানান, যে সময় মানুষের কাজ নেই, সব বন্ধ, সে সময়ও বাসের ফি নিয়েছে, বিদ্যুতের ফি নিয়েছে স্কুলগুলি।
সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের সংযোজন, ‘আমরা হাইকোর্টে পর্যন্ত গিয়েছি, আমরা মামলায় জিতি। তার পরও স্কুলগুলি বলেছে, পুরো ফি দিতে হবে। না দিতে পারলে ক্লাস করতে দেয়নি, রেজ়াল্ট দেয়নি, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। এ রকম নানা মানসিক নির্যাতন চালিয়ে পুরো ফি আদায় করেছে।’ যে স্কুলের যত বেশি নাম, যে প্রশাসনের যত কাছাকাছি, তত এ সবের বাড়বাড়ন্ত বলেও জানান তিনি। ক্ষমতার জোরে সব চেপে দেন কর্তৃপক্ষ, তাই বাইরেও আসে না কিছু।
এ নিয়ে সরকারের শরণাপন্ন হয়েও কাজ হয়নি বলে এই সময় অনলাইনকে জানিয়েছেন সুপ্রিয়বাবু। তিনি বলেন, ‘আমরা (অভিভাবকরা) কোথাও গিয়ে সুরাহা পাই না। অন্য রাজ্যে বেসরকারি স্কুলগুলির নিয়ন্ত্রণে আইন আছে। আমাদের কোনও গ্রিভান্স সেলও নেই। আমরা রাজ্য সরকারকে বারবার বলেছি। সম্প্রতি হাইকোর্ট একটি মামলার প্রেক্ষিতে রাজ্য বলেছে, রাজ্যপালের কাছে তা পাঠানো আছে।’ কিন্তু রাজ্যপালের কাছে যাওয়ার আগে তো বিধানসভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে। ‘তেমনটা হয়েছে বলে তো কখনও কোনও সংবাদমাধ্যমে পড়িনি বা দেখিনি,’ বক্তব্য সুপ্রিয়র।
ভালো শিক্ষার জন্য সন্তানকে এই সব স্কুলে পাঠাচ্ছেন বাবা, মা। প্রচুর টাকা খরচ করে পড়াচ্ছেন। কিন্তু মান নেমেই চলেছে বলেও অভিযোগ অভিভাবক সংগঠনের নেতার। সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়েও লম্বা প্রশ্নচিহ্ন।
এ দিকে, নব নালন্দার ঘটনার পর সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল টালিগঞ্জ থানায় গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়। ইউনাইটেড গার্ডিয়ানস অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আহত পড়ুয়াদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। আগামী দিনে স্কুলকে মানবিক আচরণের পরিচয় দিতে হবে। টালিগঞ্জ থানার তরফে স্কুলের প্রিন্সিপাল অরিজিৎ মিত্রের সঙ্গে দেখা করা হয়। গার্ডিয়ানস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জমা দেওয়া স্মারকলিপি অরিজিৎকে দেন থানার পুলিশকর্মীরা।