কিরণ কুমার মান্না: 'কফিন ডান্স'-এর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে! বছর পাঁচেক আগে যে ভিডিয়ো নেটপাড়ায় ঝড় তুলে দিয়েছিল। কফিন কাঁধে নাচতে নাচতে চার যুবক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বেরিয়ে ছিলেন! যাঁদের পরনে ছিল কালো স্যুট, টুপি-সানগ্লাস। ঘটনাচক্রে ঘানায় এমন মৃত্যুকালীন রীতি রয়েছে। সেখানকার মানুষ মনে করেন যে, মৃত্যু মানে শেষ নয়, নতুন জীবনের শুরু। তাই এমন উদযাপন, তবে খাস বাংলা দেখল এক বিরল শ্মশানযাত্রা! মৃত্যুতে ব্যান্ড বাজিয়ে সেলিব্রেশন হল! ফিরিয়ে দিল সেই 'কফিন ডান্স'-এর স্মৃতিই!
নজিরবিহীন এই ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার মাইশোরা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের শ্যামসুন্দরপুর পাটনা গ্ৰামে। ১০৪ বছরের দাদুর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ নয় নাতিপুতিরা। বরং তাঁরা শ্মশানযাত্রায় ব্যান্ড বাজিয়ে রীতিমতো সেলিব্রেশন করলেন! উদ্দাম নেচেই বিদায় জানালেন দাদুকে। ১০৪ বছরের বয়সে দেবেন্দ্রনাথ আদক প্রয়াত হন গত ১২ জানুয়ারি। এই বয়সেও তিনি হাঁটাচলা করতে পারতেন। আচমকাই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর এই দীর্ঘ জীবনের পর ১০৪ বছর বয়সে পরলোক গমনের কারণে তাঁর বাড়ির আত্মীয় স্বজন ও নাতিপুতিরা ব্যান্ড এনে, একেবারে উত্সবের মেজাজে দাদুকে নিয়ে যান দাহ করতে।
এই ঘটনায় হতবাক সকলেই। যে কোনোও পরিবারেই সদস্য বিয়োগের ঘটনায় শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন সকলে। এ যেন একাবারে উল্টো ছবি। যেন শ্মশানযাত্রা না কোনও কনসার্ট। মৃত দেবেন্দ্রনাথ দীর্ঘ বছর জীবিত থাকার পর প্রয়াত হয়েছেন। ঠিক এই কারণেই আত্মীয় পরিজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশিরা আনন্দের সঙ্গেই তাঁকে দাহ করতে নিয়ে যান। তাদের কাছে মৃত্যুটা দুঃখের নয় বরং ছিল আনন্দের। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই দেবেন্দ্রনাথ এই ধরাধামে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন ঈশ্বরের সেবক। নাতিপুতিরা জানিয়েছেন যে, তাঁর কাছ থেকে পরিবার সবকিছুই পেয়েছে। ১০৪ বছর ধরে দাদু অনেক কিছু দিয়ে গিয়েছেন। আর কিছুই ওঁর থেকে চাওয়ার ছিল না! তবে এই উদযাপেনর আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক অপ্রাপ্তির গল্প। পরিবারের দাবি, শতায়ু মানুষটিকে কিছুই ফিরিয়ে দিতে পারেননি তাঁরা। তাই অন্তিম যাত্রায় হাসি মুখেই তাঁকে বিদায় জানানো ছিল শ্রদ্ধা উৎসর্গের একটা রূপ।