২৭ বছর আগে পদ্মায় পড়ে মৃত পড়ুয়াদের স্মরণ করল তৃণমূল
বর্তমান | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, ডোমকল: সে-ও এক ১৩ জানুয়ারি, ১৯৯৮ সাল। রমজান মাস। ভোরের সেহেরি খেয়ে ফজরের আজানের অপেক্ষা করছিলেন কেউ কেউ। বাইরে তখন ঘুটেঘুটে অন্ধকার, সঙ্গে দোসর ঘন কুয়াশা। হঠাৎ বিকট শব্দ। তারপর নিশ্চুপ চারিদিক। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ততক্ষণে জলঙ্গির বাঁকে পদ্মায় ডুবতে বসেছে ছাত্রছাত্রী বোঝাই আস্ত বাস। নদীর বুকে টর্চ ফেলতেই দেখা যায় জলে ভাসছে মানুষের মাথা। সেই জলে ঝাঁপ দিয়ে কাউকে উদ্ধার করে আনা, কাউকে চোখের সামনে ডুবে মরতে দেখা। সেই সব স্মৃতি আজও অমলিন পদ্মাপারের বাসিন্দাদের। এরপরে পদ্মা দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। তবে ২৭ বছরেও এতটুকুও মরচে ধরেনি সেই স্মৃতিতে। সেদিন করিমপুর থেকে লালবাগে পিকনিকে গিয়েছিল বাসভর্তি ছাত্রছাত্রী। ১৩ জানুয়ারি ভোরবেলা কুয়াশার মধ্যে লালবাগ থেকে করিমপুর ফিরছিল বাসটি। পদ্মার বাঁকের কাছে আসতেই হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। ছাত্রছাত্রী বোঝাই বাস গিয়ে পড়ে কনকনে ঠান্ডার পদ্মার জলে। শব্দ শুনেই উদ্ধারে নামেন আশপাশের বাসিন্দারা। তাঁরাই অনেককে আধমরা অবস্থায় উদ্ধার করেন। তাঁদের চেষ্টায় গোটা কয়েক প্রাণ রক্ষা পেলেও জলে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয় অনেকের। সরকারি পরিসখ্যান অনুযায়ী, বাসের মধ্যে ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। বেশিরভাগই করিমপুরের। তাঁদের মধ্যে ৬২ জন মারা যায়। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে খবর চাউড় হতেই এলাকায় ভিড় লেগে যায়। স্বজন হারানোর কান্নায় ফেটে পরে পদ্মার পার। কয়েকদিন বাদে ছুটে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এরপরে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পদ্মাপাড়ে মোটা গার্ডওয়াল দেওয়া হয়েছে। গতি কমাতে বসানো হয়েছে একাধিক স্পিড ব্রেকার। লাগানো হয়েছে লাইট।
স্থানীয় বাসিন্দা রেখা বিবি, সিনুহারা বিবিরা ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, এখনও ওই দিনের কথা ভুলতে পারিনি। শরিফুল ইসলাম নামের অপর এক বাসিন্দা বলেন, তখন আমার বয়স ৩০। ওই ঠান্ডার মধ্যেই জলে লাফ দিয়ে অনেককে তুলে এনেছি। তাঁদের কাউকে বাঁচাতে পেরেছি, কাউকে পারিনি। আজও ভুলতে পারিনি সেদিনের ইতিহাস। সোমবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের তরফে ওই ঘটনার স্মরণে পদ্মাপারে একটি অনুষ্ঠান করা হয়। মৃতদের আত্মার শান্তিকামনা করা হয়।