ফলন ভালো হওয়ায় সব্জির দাম তলানিতে, মাথায় হাত চাষিদের
বর্তমান | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, লালবাগ: বাজারে দাম নেই সব্জির। পাইকারি বাজারে ৪-৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেগুন, শিম, মুলো, টমাটো, গাজর। খুচরো বাজারে এগুলোই কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা বেশি। কাঁচালঙ্কা, বাঁধাকপিরও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। এই দামে বিক্রি ফসল বাজারে নিয়ে আসার খরচও উঠছে না। ফলে চাষিদের একাংশ মাঠমুখো হচ্ছেন না। জমিতেই পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ফসল। এই পরিস্থিতিতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে লালবাগ মহকুমার সব্জি চাষিরা। জমি লিজ নিয়ে চাষ করেছেন এমন চাষিরা আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে সব্জির এহেন দামে হাসি ফুটেছে সাধারণ মানুষের মুখে। প্রতিদিন ব্যাগ ভরে সব্জি নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যাচ্ছে তাদের।
লালবাগ মহকুমার মুর্শিদাবাদ, জিয়াগঞ্জ, ভগবানগোলা ও রানিতলা থানার বিস্তীর্ণ এলাকায় ধানের পাশাপাশি ব্যাপক হারে সব্জি চাষ হয়। কিন্তু বাজারে সব্জির দাম না থাকায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। চাষিরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে সব্জির দাম তলানিতে। পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল বেগুন, টমাটো, শিম, লঙ্কা গাজরের দাম ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। এই অবস্থায় লেবার দিয়ে ফসল তুলে বাজারে নিয়ে আসার খরচ উঠছে না। বাজারে দাম না থাকায় চাষিরা জমি থেকে ফসল তুলছেন না। জিয়াগঞ্জ থানার তকিয়ার বিনয় মণ্ডল এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে কয়েকদিন দাম পেয়েছিলাম। এখন পাইকারি বাজারে এক কুইন্টাল শিম ৩০০-৪৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। অথচ জমি থেকে এক কুইন্ট্যাল শিম তুলতে দু’জন লেবার লাগে। তাদের মজুরি ৭০০ টাকা। বাজারে নিয়ে যেতে আরও ১০০ টাকা। কাজেই এক কুইন্টাল শিম বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে খরচের অর্ধেক টাকা উঠছে না। কাজেই প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জমিতে যাচ্ছি না। মুর্শিদাবাদ থানার নশিপুরের সেলিম শেখ দেড় বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বাজারে বেগুনের বিক্রি নেই। এই সময়ে পাইকারি বাজারে বেগুনের কেজি ১৫-১৮ টাকা হওয়া উচিত। সেখানে ৪-৫ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের জমিতে পোকার উপদ্রব খুব বেশি। প্রায় প্রতিদিন কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। কয়েকদিন ধরে কীটনাশক স্প্রে করা বন্ধ করেছি। যা হওয়ার হোক। আড়াই বিঘা জমিতে লঙ্কা চাষ করেছেন ভগবানগোলার কিসমত শেখ। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে এই সময়ে পাইকারি বাজারে কাঁচালঙ্কা ৪০-৫০ টাকা কেজি থাকে। এবছর দাম রয়েছে ২০-২৫ টাকা। প্রতি বছর আম, কাঠালের সময়ে ফসলের দাম একটু কমে। কিন্তু এতটা কাটতি হয় না। জমি লিজ নিয়ে সব্জি চাষ করেছেন এমন চাষিদের অবস্থা আরও করুণ। মহম্মদপুর দলেলপাড়ার তরুণ দাস ২৫ হাজার টাকায় এক বিঘা জমি লিজে নিয়ে বেগুন লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, লিজ এবং বেগুন চাষের খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা লেগেছে। বেগুন বিক্রি করে লিজের টাকাটাই উঠবে না। লালবাগের মনোজ হাজরা বলেন, অন্য সময়ে আকাশছোঁয়া দামের জন্য সব্জিতে হাত দেওয়া যায় না। এখন দাম অনেকটাই কম। তাই প্রতিদিন ব্যাগ ভরে সব্জি কিনছি। মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তা সুনীত দাস বলেন, এবারে ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে জোগান বেশি। তাই পাইকারি বাজারে চাষিরা দাম পাচ্ছেন না।