• ভরা পর্যটন মরশুমেও পর্যটকশূন্য দেউলঘাটা
    বর্তমান | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • পিনাকী ধোলে, পুরুলিয়া: শীতের মরশুমে পর্যটকদের ঢল নেমেছে অযোধ্যা পাহাড়ে। কিন্তু, অযোধ্যা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেউলঘাটা ভরা মরশুমেও পর্যটকশূন্য। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক বছর আগেও শীতের সময় পর্যটকরা আসতেন দেউলঘাটায়। কিন্তু, তেমন প্রচার না থাকার কারণে দেউলঘাটা থেকে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়েছেন। আড়ষা ও জয়পুর ব্লকের সীমানা দেউলঘাটায় কংসাবতী নদীর তীরে দু’টি সুপ্রাচীন মন্দির জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরও একটি মন্দির ছিল। সংরক্ষণের অভাবে প্রায় দু’দশক আগে সেটি ধ্বংস হয়ে যায়। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ধ্বংসস্তূপ। মন্দিরের গায়ে রয়েছে অসাধারণ পাথরের ভাস্কর্য। মন্দিরের দরজা ত্রিভুজাকৃতি।  মন্দিরে অধিষ্টিত রয়েছেন কালো পাথরে খোদিত দেবী দশভুজা। দেবী মূর্তির মাথার উপর রয়েছে চক্র স্তম্ভ। পায়ের তলায় আছে পরিদের মূর্তি। মায়ের দু’পাশে রয়েছে অষ্ট মাতৃকা রূপ। তবে প্রচলিত দুর্গা প্রতিমায় যেমন দেবীর ডান পা সিংহের উপর ও বাঁ পা মহিষের উপর দেখা যায়, এই মূর্তির ক্ষেত্রে ঠিক তা বিপরীত। তাছাড়া দেবীর সঙ্গে নেই তাঁর সন্তানেরা। এই মন্দিরে পাথরে খোদিত দশভুজার মূর্তি ছাড়াও অনেক দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে। যেমন পদ্মের উপর দাঁড়িয়ে থাকা চার ফুট উচ্চতার চতুর্ভুজা দেবীমূর্তি, সিংহের পিঠে দন্ডায়মান চতুর্ভুজা দেবীমূর্তি,  আট হাতের রণচণ্ডী দেবীমূর্তি, তিন ফুট উচ্চতার গণেশ মূর্তি, ভগ্ন ধ্যানমগ্ন মূর্তি, শিবলিঙ্গ ইত্যাদি। বহু মূর্তি চুরিও গিয়েছে। এই মন্দির কারা প্রতিষ্ঠা করেছিল, মূর্তিগুলিই বা কত বছরের পুরাতন, সেনিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, দশভুজা মূর্তিটি আজ থেকে দু’আড়াই হাজারেরও বেশি পুরাতন বৌদ্ধ যুগের। মন্দিরের গঠন, মূর্তির কারুকার্যে রয়েছে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ছাপ। আবার ভিন্ন মতে, এসবই জৈন সংস্কৃতির। পরে ব্রাহ্মণদের সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এনিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকে। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেউলঘাটা নামটি এসেছে দু’টি শব্দ ‘দেউল’ অর্থাৎ মন্দির এবং ‘ঘাট’ অর্থাৎ কাঁসাই নদীঘাট থেকে। জনশ্রুতি, প্রাচীন সময়ে তাম্রলিপ্তের (বর্তমান তমলুক) বণিকরা ঝাড়খণ্ডে বাণিজ্য করতে যেতেন। তখন কংসাবতী নদীর ঘাটে নৌকা রেখে তাঁরা এই মন্দিরে পুজো দিতেন।


    বর্তমানে মন্দিরগুলির জীর্ণ দশা। সংরক্ষণের অভাবে ধুঁকতে বসেছে। এলাকা ঝোপঝাড়ে ঢেকে গিয়েছে। কেন্দ্র কিংবা রাজ্য কেউই সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, অবিলম্বে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুক সরকার। পবন সিং বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই জায়গা দর্শনে একসময় পর্যটকরা আসতেন। কিন্তু, প্রশাসনের অবহেলায় এলাকা জঙ্গলে ঢেকেছে। কিসের টানে আসবেন পর্যটকরা? সেরকম কোনও ব্যবস্থাই তো করেনি প্রসাশন। যদিও প্রশাসনের এক আধিকারিকের আশ্বাস, বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)