নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সাতসকালে স্কুলে ঢোকার মুখেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা! ভেঙে পড়ল পাঁচতলার ক্লাসরুমের জানালার কাচ। ঠিক সেই সময় নীচের চাতালে প্রার্থনা শুরুর তোড়জোড় চলছিল। নবম শ্রেণির দুই পড়ুয়ার মাথায় এসে পড়ে জানালার প্যানেলের কাচ। সোমবার সকাল সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের নব নালন্দা স্কুলে। গুরুতর জখম হয়েছে এক ছাত্র। তার মাথা ফালাফালা হয়ে যায়। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ৪০টি সেলাই পড়েছে পড়ুয়ার ক্ষতস্থানে। আহত অপর ছাত্রকে অবশ্য প্রাথমিক শুশ্রুষার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
গোটা ঘটনায় স্কুলের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। তাঁদের আরও অভিযোগ, প্রতিবছর ‘অ্যাম্বুলেন্স’ খাতে টাকা নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এদিন আহত ছাত্রদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলের তরফে কোনও অ্যাম্বুলেন্স মেলেনি। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভেও শামিল হন অভিভাবকরা। দফায় দফায় উত্তেজনা তৈরি হয় স্কুলচত্বরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে টালিগঞ্জ থানার পুলিস। ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছে শিক্ষাদপ্তর।
সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র জানিয়েছে, সেই সময় আচমকা বিকট শব্দ শোনা যায়। এরপরেই পাঁচতলায় থাকা সপ্তম শ্রেণির একটি ক্লাসরুমের জানলার কাচের প্যানেল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে দেখা যায়। আর তা আছড়ে পড়ে নবম শ্রেণির লাইনের উপরে। এক ছাত্রের মাথায় একাধিক জায়গায় চোট লাগে। রক্তে ভেসে যায় তার ইউনিফর্ম। অপর ছাত্রের ঘাড়ে ও হাতে আঘাত লাগে। হাত থেকে নাগাড়ে রক্ত বের হচ্ছিল। ঘটনার কথা নিমেষে পৌঁছে যায় বাইরে অপেক্ষারত অভিভাবকদের কানে। সৌরভ পাল নামে এক অভিভাবকের কথায়, এক ছাত্রের মাকে মাঝপথ থেকে ডেকে আনা হয়। শেষপর্যন্ত এক অভিভাবকের গাড়িতেই দু’জনকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গুরুতর আহত পড়ুয়াকে পরে আর জি করে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের মা মোনালিসা সেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা স্কুলের জন্যই হল। অথচ স্কুলের তরফে কোনও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। প্রতিবছর ‘অ্যাম্বুলেন্স’ খাতে টাকা নেয় কর্তৃপক্ষ। তাহলে বিপদের সময় পরিষেবা কোথায়? কর্তৃপক্ষের কি কোনও দায় নেই? স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে ভাস্বতী দত্তের অবশ্য দাবি, ‘বাচ্চারা জানিয়েছে. তারা নিজেই জানালা খুলতে গিয়েছিল। তাতেই কাচ ভেঙেছে।’ যদিও এই দাবি মানতে নারাজ অভিভাবকদের সংগঠন ইউনাইটেড গার্জিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন। নব নালন্দার প্রিন্সিপাল অরিজিৎ মিত্রকে ঘিরে ধরে দীর্ঘসময় বিক্ষোভ দেখান বাবা-মায়েরা। প্রিন্সিপাল বলেন, ‘আজকের দুর্ঘটনায় আমাদের একটাই দোষ যে সময় মতো অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা যায়নি। চালক উপস্থিত ছিলেন না। তাঁকে ইতিমধ্যেই শো-কজ করা হয়েছে।’