অর্ঘ্য বিশ্বাস, ময়নাগুড়ি
প্রায়ই সেখানে দেখা মেলে গোরুমারার একশৃঙ্গ গন্ডার অথবা হাতির দলের। সন্ধ্যা হলেই দল বেঁধে বাইসন কিংবা হরিণের দল আসে জল খেতে। প্রশাসনিক নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বন্যদের সেই বিচরণ ভূমিজুড়েই চলছে চুটিয়ে পিকনিক। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকছে মদের বোতল ও খাবারের উচ্ছিষ্ট। রবিবার রাত পর্যন্ত সেখানে পিকনিক পার্টিদের উৎসব চলে। তখন কাছাকাছি এসে পড়ে হাতির পাল। বনকর্মী ও পুলিশরা তড়িঘড়ি মানুষজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ায় বড় বিপদের হাত থেকে রেহাই মেলে।
ময়নাগুড়ি ব্লকের শেষ প্রান্তে গোরুমারা জঙ্গল ঘেঁষা রামশাই। জলঢাকা ও মূর্তি নদীর চর–সহ পাশ্ববর্তী এলাকাগুলিতে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ। সেই এলাকার কিছুটা দূরেই আসর জমাচ্ছেন পিকনিক করতে আসা মানুষজন৷ তবে বন দপ্তরের তরফে জঙ্গল লাগোয়া জায়গাগুলোয় পিকনিক করতে নিষেধ করা হয়েছিল। বিকেলের পর এলাকা ছাড়ার নির্দেশও ছিল। কিন্তু সেই নিষেধকে তোয়াক্কা না করে ফূর্তিতে মেতে উঠছেন একশ্রেণির মানুষ।
রবিবার অবস্থা চরমে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়দানে নামে ময়নাগুড়ি পুলিশের পাশাপাশি বন দপ্তরের তিনটি রেঞ্জ। গোরুমারা সাউথ রেঞ্জের বুধুরাম বিট, রামশাই মোবাইল স্কোয়াড, জলপাইগুড়ি বন বিভাগের রামাশাই রেঞ্জের দুই রেঞ্জ অফিসার–সহ বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ফেরত পাঠান পিকনিক পার্টিদের। জানা গিয়েছে, রবিবার স্থানীয়রা ছাড়াও বাইরে থেকে প্রচুর গাড়ি রামশাইতে আসে।
সন্ধ্যে নাগাদ সেখানে প্রায় ৩০টি হাতির একটি দল জঙ্গলের বাইরে বেরিয়ে আসার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি পিকনিকে আসা লোকজনদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বন্যপ্রাণ চলাচলের মূল করিডর জুড়ে পড়ে রয়েছে ভাঙা কাঁচের বোতল–সহ প্লাস্টিকের থালা–গ্লাস। যা নিয়ে বন্যদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সব দেখেও নীরব প্রশাসন, এই দাবি করে পরিবেশপ্রেমী অণির্বান মজুমদার বললেন, ‘পুলিশ ও বন দপ্তরের নজরদারি সত্ত্বেও কী ভাবে বন্যপ্রাণীর যাওয়া–আসার রাস্তায় মদের বোতল, থালা–গ্লাস ফেলে রাখা হচ্ছে, তা সত্যিই চিন্তার।’ যদিও যে এলাকায় পিকনিক হয়েছে তা গোরুমারার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে বলে দাবি কররেন গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের সাউথ বিটের রেঞ্জ অফিসার ধ্রুবজ্যোতি বিশ্বাস। তিনি জানান, বন্যপ্রাণের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে তাঁরা নজরদারি চালিয়েছেন৷ এলাকাটিকে দ্রুত আবর্জনামুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রামশাই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিশ্বজিৎ ওঁরাও বলেন, ‘বন দপ্তরের তরফে জঙ্গলের খুব কাছাকাছি পিকনিক করতে বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না। পাশাপাশি তাঁরা জায়গাগুলি নোংরা করে রাখছেন।’ বন্যপ্রাণীর বিচরণ ভূমিতে মদ্যপদের দাপাদাপি রুখতে পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই বিষয়ে ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।