কটা সময়ে ‘প্রাইম টাইম’ ছিল রাত ১২টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা। পথ দুর্ঘটনার প্রাইম টাইম। মধ্যরাত থেকে পরদিন সাতসকাল, এই সময়ের মধ্যে সব চেয়ে বেশি পথ দুর্ঘটনা ঘটত কলকাতার রাজপথে। গত কয়েক বছর ধরে এটাই ছিল শহরের ট্রেন্ড।
তবে পুলিশের লাগাতার নজরদারি এবং হয়তো কিছুটা হলেও নাগরিক সচেতনতার ফলে রাতের শহরের ফাঁকা রাস্তায় দুর্ঘটনায় রাশ টানা গেলেও লালবাজারের কর্তাদের কাছে এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা— দিনের এই চার ঘণ্টা। কারণ, সদ্য শেষ হওয়া ইংরেজি বছরে দিনের এই ব্যস্ত সময়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, ২০২৪ সালে শহরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৯১ জনের। তার মধ্যে ৫১ জনই মারা গিয়েছেন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে। ওই চার ঘণ্টায় পথ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩৮৯ জন। সব চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে সকাল ৮টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে— ৯৭টি। ২০২৩ সালে সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৭ জন, আহত হয়েছিলেন ২৯০ জন। চলতি বছরে যাতে এই ট্রেন্ডে রাশ টানা যায়, সে জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শহরের সব ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসারদের।
কিন্তু কলকাতার রাস্তায় দুর্ঘটনার প্রাইম টাইম কেন পাল্টে যাওয়ার মুখে?
লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতায় সব চেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সমীক্ষা বলছে, সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে প্রতি মিনিটে ৫০০–র বেশি গাড়ি এবং ১৬০টির উপর মোটরবাইক চলাচল করে। সেই সঙ্গে পথচারীরা তো আছেনই।
গত এক বছরে কলকাতার রাস্তায় যানবাহন বেড়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার। অথচ রাস্তার আয়তন বাড়েনি। রাস্তার যতটা, তার তুলনায় গাড়ি ও যাত্রিসংখ্যা না–বাড়ার পাশাপাশি অফিসের ব্যস্ত সময়ে কে কত বেশি যাত্রী তুলতে পারে, সে জন্য বাসেদের রেষারেষি দিনের ওই সময়ে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। সেই সঙ্গে রয়েছেন আইন না–মানা বেপরোয়া গাড়ির চালকরা।
কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘অফিস টাইমে গাড়ির চাপ এত বেশি থাকে যে, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। ফলে, ট্র্যাফিক আইন অমান্য করা সব গাড়িকে সব সময়ে আটকানো সম্ভব হয় না।’ এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ঠেকাতে চালকদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজনের পাশাপাশি মোটরবাইক চালকদেরও সচেতন করতে প্রচারে জোর দিয়েছে লালবাজার। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঠেকাতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাস্তায় স্পিড ক্যালকুলেটরের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি অফিস টাইমে চেকিং বাড়ানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে চালকদেরও সচেতন হওয়া জরুরি।’