• ফের নতুন করে বাঘের পায়ের ছাপ, জ়িনাতকে কব্জা করা টিমই বেলপাহাড়িতে
    এই সময় | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, বেলপাহাড়ি ও বান্দোয়ান: ট্র্যাপ ক্যামেরা, স্মার্ট ক্যামেরা, খালি চোখে নজরদারি — সোমবার সারাদিন কোনও ফাঁদেই ধরা দিল না ঝাড়খণ্ড থেকে ঢুকে পড়া বাঘ। কিন্তু নতুন নতুন জায়গায় পায়ের ছাপ রেখে নিজের অস্তিত্ব নিশ্চিন্ত করেছে সে। ঝাড়গ্রাম থেকে পুরুলিয়া, দুই জেলারই বনকর্মীরা একাধিক জায়গায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছেন।

    আতঙ্কে বন্ধ থেকেছে স্থানীয় স্কুল‍, বসেনি মকর সংক্রান্তির আগের হাটও। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় বাংলার বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘যে জায়গায় বাঘটি রয়েছে, তার চারদিকে জাল দিয়ে ঘেরা হয়েছে। মোট ৪০টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সুন্দরবন থেকে ইতিমধ্যে একটি টিম এসে পৌঁছেছে। এঁরাই গতবার জ়িনাতকে ধরেছিলেন।’

    ধরা দেওয়ার আগে সপ্তাহ দেড়েক নাকানিচোবানি খাইয়েছিল সিমলিপালের বাঘিনি জ়িনাত। তা–ও তার গলায় তখন রেডিয়ো কলার ছিল‍। রবিবার পুরুলিয়া ছুঁয়ে যে বাঘটি ঝাড়গ্রাম ঢুকেছে, তার গলায় এমন কলার বসানো না–থাকায় তাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্র্যাক করার উপায় নেই। সোমবার নতুন করে বেলপাহাড়ি ব্লকের তেলিঘানা, হরিণঘেরা এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ মেলে। যদিও এ দিন গ্রামবাসীরা বাঘ দেখতে পাননি। রবিবার মনিয়ারডি গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলপথে প্রথম বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছিল। এ দিন মনিয়ারডি গ্রামের পাশাপাশি বগডোবা, তেলিঘানা, হরিণঘেরায় ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। বন দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, কাঠা–পাতা কুড়োতে বা গবাদি পশু চরাতে কেউ যেন জঙ্গলে না–যান।

    এ দিকে মকর পরবের আগে জঙ্গলমহলে বাঘের আতঙ্কে গ্রামের সাধারণ মানুষজন নতুন জামা কেনার সুযোগও পাননি। প্রতি বছর মকর পরবে স্নান সেরে নতুন জামা পরার পাশাপাশি পিঠে-পুলির আয়োজন করেন স্থানীয়রা। সে জন্য হাটে বা বাজারে এসে জিনিসপত্র কেনেন।

    সে কথা স্বীকার করে বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ সিং সর্দার বলেন, ‘সংক্রান্তির ঠিক আগে কেনাকাটায় মানুষের খুব উৎসাহ থাকে। কিন্তু এ বার যেহেতু বন দপ্তরের পক্ষ থেকে বাঘের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে, তাই আমরাও কাঁকড়াঝোড়, ময়ূরঝর্ণা, বগডোবা, চিটামাটি, ছুরিমারা, মনিয়ারডি সংলগ্ন গ্রামগুলিকে সতর্ক থাকতে বলেছি।

    স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গল টুডুর কথায়, ‘জঙ্গলে কেউ শালপাতা বা কুরকুটও (লাল পিঁপড়ে) তুলতে যায়নি। বাঘের জন্য সবাই ভয়ে আছে। বাঘটি কোন দিকে যাচ্ছে, কোন জঙ্গলে আছে — বোঝা যাচ্ছে না তো।’ বাঘের ভয়ে বগডোবা প্রাথমিক বিদ্যালয় এ দিন বন্ধ ছিল। বগডোবা গ্রামের বাসিন্দা জয়রাম হাঁসদার কথায়, ‘বাঘের ভয়ে বাচ্চাদের আজ কেউ স্কুলে পাঠায়নি।’

    অন্য দিকে, ঝাড়গ্রাম লাগোয়া পুরুলিয়ার বান্দোয়ানেও লাউপাল এলাকায় সোমবার সকালে বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছে। স্থানীয়দের সতর্ক করে সেখানে নজরদারি চা‍লাচ্ছে বন দপ্তর। গত এক সপ্তাহ ধরে পড়শি ঝাড়খণ্ডের সরাই কেলা খরসোয়া জেলার চান্ডিলে বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া যাচ্ছিল। ঝাড়খণ্ডের সেই বাঘটিই বান্দোয়ান ও বেলপাহাড়ি এলাকায় ঘুরছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ চান্ডিল বনাঞ্চলের সঙ্গে দলমা পাহাড় ও পুরুলিয়ার বান্দোয়ান এলাকার যোগ রয়েছে। আপাতত বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের যমুনাগোড়া এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা বসেছে। কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাতোর কথায়, ‘এখন বাঘের ছবি পাওয়া যায়নি। তবে যে পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে তা বাঘের বলেই মনে হয়েছে। পুরুলিয়া বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রামের একটি অংশে ঘুরছে সেটি। তবে কোনও ক্ষতি করেনি।’

  • Link to this news (এই সময়)