• নম্বরপ্লেটহীন ডাম্পারের দৌরাত্ম্য, আতঙ্কে স্থানীয়রা
    এই সময় | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • বাসুদেব ভট্টাচার্য ■ ময়নাগুড়ি

    জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়ি থেকে চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত রাস্তায় প্রতিদিন পাচার হয়ে যাচ্ছে লরি লরি বালি। দিনের বেলা এই সড়কের এক রকম চেহারা। আর সূর্য ডুবলেই বদলে যায় সবকিছু। অন্ধকার রাস্তা তখন চলে যায় ডাম্পারের দখলে। বালি বোঝাই সারি সারি নম্বরপ্লেটহীন ডাম্পার দাপিয়ে বেড়ায় এই সড়কে।

    ওদলাবাড়ি থেকে শুরু হয় এদের দৌরাত্ম্য। সেটা চলে বৈকুন্ঠপুর ফরেস্ট ডিভিশন থেকে ক্রান্তি ফাঁড়ি হয়ে চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত। ওদলাবাড়ির লিস, ঘিষ, মাল নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর, বালি, ডলোমাইট তুলে প্রতিদিন পাচার করা হয়। সবকিছুই ঘটে পুলিশের নাকের ডগায়।

    সবটা জেনেও কি তাহলে কোনও বিশেষ কারণে পুলিশ চোখ বন্ধ করে রয়েছে? এই এলাকার ট্র্যাফিক পুলিশ, হাইওয়ে অথরিটিও না দেখার ভান করে রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ভূমি রাজস্ব দপ্তরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। নম্বরপ্লেট ছাড়া ডাম্পারের দৌরাত্ম্য নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও পরিস্থিতি বদল হয়নি বলে অভিযোগ। জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রিয়দর্শিনী ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিন‍ি ফোন তোলেননি।

    গাড়িতে নম্বর না থাকা সত্ত্বেও কী করে রাস্তা দিয়ে চলছে? জেলা পরিবহণ দপ্তরের মদতে এই ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাম্পার চালক বলেন‍, ‘জেলা পরিবহণ দপ্তরের সঙ্গে বোঝাপড়া রয়েছে। বালি পাচারের সময়ে কোনও প্রমাণ না রাখার জন্য ডাম্পারে নম্বর খুলে ফেলা হয়েছে। অনেকে আবার নম্বর প্লেটে কাদা লেপে দিয়ে পাচারে গাড়ি ব্যবহার করে। পরে জল দিয়ে ধুয়ে নেওয়া হয়।’

    জানা গিয়েছে, বালি পাচারের জন্য লরি বা ডাম্পারপিছু ৪ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসোহারা দিতে হয়। সেই টাকার জন্যই সব জেনেও না দেখার ভান করে থাকে পুলিশ। যদিও জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সমীর আহমেদকে এই নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি শুধু বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’

    মালবাজার থেকে মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত মোট চারটি থানা রয়েছে। নম্বরপ্লেটহীন ডাম্পারগুলি কোনও দুর্ঘটনা ঘটালে চিহ্ন‍িত করার উপায়ও থাকে না। মাস ছয়েক আগেও ময়নাগুড়ি শহরেই পাথর বোঝাই একটি ডাম্পার এক মোটরবাইক আরোহীকে পিষে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। নম্বর না থাকায় সেই গাড়িটিকে চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে দোষীকে গ্রেপ্তারও করেনি পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কার মদতে এই অবৈধ কাজ চলছে?

  • Link to this news (এই সময়)