কলকাতা পুরসভার বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষকে খতম করতে ৫০ লাখ নয়, ১ কোটি টাকার সুপারি দেওয়া হয়েছিল! বিহারের কুখ্যাত পাপ্পু চৌধুরি গ্যাং–এর সদস্য আদিল হুসেন গ্রেপ্তার হতে এমনই তথ্য জানতে পারলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ধৃত আফরোজ় ওরফে গুলজ়ার খান দাবি করেছিল, দু’হাজার বর্গফুটের একটি জায়গা নিয়ে গোলমালের জেরেই সুশান্তকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল সে। মাসদু’য়েক পরে জানা যাচ্ছে, কোটি টাকার সুপারির নেপথ্যে কারণ সেটি নয়। আড়ালে রয়েছে অন্য কেউ। এবং সেই ব্যক্তি এখনও অধরা।
সুশান্তর উপরে হামলার ষড়যন্ত্রে রাজনৈতিক যোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। চুক্তি অনুযায়ী টাকা না–পৌঁছনোয় শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসে পাপ্পুর তিন শার্প শুটার। সেই সুযোগ লুফে নিয়ে ‘শিক্ষানবিশ’ শুটার যুবরাজ সিং প্রমাণ করতে চেয়েছিল, সে–ও কোনও অংশ কম যায় না। যদিও দেশি ‘কাট্টা’র ট্রিগার লক হয়ে গোটা পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর সন্ধেয় কসবায় সুশান্তর উপরে হামলা করে যুবরাজ। এমন কাজে সে ছিল আনকোরা। ছোটখাটো চুরি–ডাকাতিতে হাত পাকিয়েছিল। কলকাতায় এসেছিল তার ‘সিনিয়ররা’ কী ভাবে খুনের অপারেশন করে, তা জানতে। কিন্তু পাপ্পুর দলের কাছে সময়মতো ১ কোটি টাকার সুপারির সবটা না–পৌঁছনোয় খুনের প্ল্যান থেকে সরে আসার নির্দেশ আসে ওই তিন শার্প শুটারের কাছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়েছিস যুবরাজ।
পুলিশ সূত্রের খবর, যুবরাজের পিছনের গাড়িতে যাচ্ছিল গুলজ়ার–সহ বিহার থেকে আসা ওই তিন জন। অপারেশন ফেল হওয়ায় তারা পালিয়ে যায়। এমনকী স্কুটারচালক বিহারের বৈশালির যুবক লক্ষ্মণ শর্মাও চম্পট দেয়। পরে অবশ্য প্রত্যেকেই ধরা পড়ে। সমস্তিপুরের বাসিন্দা মহম্মদ ফুলবাবু জালে পড়তেই পাপ্পু চৌধুরি গ্যাং–এর বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
রবিবার আবু ধাবি থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে আদিল হুসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১ কোটি সুপারির বিষয়ে জানা যায়। তদন্তের পরবর্তী ধাপে গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন, সুশান্তকে সরিয়ে দিতে কেন বিপুল অঙ্কের সুপারে দেওয়া হলো পাপ্পু গ্যাং–কে? কারণ, কলকাতার গুলশন কলোনির ২ হাজার বর্গফুটের যে জায়গার কথা বলা হচ্ছে, তার দামের থেকে খুনের সুপারির টাকার অঙ্ক কয়েক গুণ বেশি! তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে এক বড় মাপের নেতার সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।
গুলশন কলোনির জমি দখল এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছিলেন সুশান্ত। কে, কী ভাবে জমি দখল করছেন, তা–ও তিনি নির্দিষ্ট জায়গাতেই নালিশও করেছেন। আবার সুশান্তের বিরুদ্ধেও এলাকা দল নিয়ে দলের একাংশের অভিযোগ রয়েছে। ইএম বাইপাস লাগোয়া এলাকায় কার প্রভাব বেশি, তা নিয়ে গোষ্ঠিদ্বন্দ্বে প্রায়ই উত্তপ্ত হয়েছে। পুলিশ খতিয়ে দেখছেন, সুশান্তকে সরিয়ে দিতে পারলে, আখেরে কার লাভ? এ বিষয়ে সুশান্তের বক্তব্য, ‘পুলিশি তদন্ত চলছে। আমি চাই প্রকৃত দোষী শাস্তি পাক।’