অবৈধ বিস্ফোরকের কারবার, গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত বিজেপি বুথ এজেন্ট
বর্তমান | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: রামপুরহাটে বিস্ফোরক উদ্ধার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত বিজেপির বুথ এজেন্ট শাহে আলম ওরফে বিকিকে গ্রেপ্তার করা হল। রবিবার রাতে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে ১৪নম্বর জাতীয় সড়কের ভল্লা ক্যানেল মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার ধৃতের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইন সহ একাধিক ধারা যুক্ত করে রামপুরহাট আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী সৈকত হাটি বলেন, ধৃতকে পাঁচদিন নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল পুলিস। বিচারক তিনদিন পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগেও সে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় নলহাটি থানার পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। গত মঙ্গলবার রামপুরহাটে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনাতেও পুলিস স্বতঃপ্রণোদিত পাঁচজনের নামে এফআইআর করে। তাতে প্রথম নাম রয়েছে বিজেপির ওই বুথ এজেন্টের।
জেলা পুলিসের দাবি, পাথর বলয়ে অবৈধ বিস্ফোরক কারবারের অন্যতম মাথা বিকি। এফআইআরে বিকির নাম প্রথমেই রয়েছে। বাকি অভিযুক্তরা তার অবৈধ কারবারের এজেন্ট। বিবিকে জেরা করে তাদের হদিশ পেতে চাইছে পুলিস। এই গ্রেপ্তার ঘিরে বীরভূম জেলায় রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, জেলার যে কোনও জায়গায় বিস্ফোরক উদ্ধার হলেই বিজেপি ও সিপিএম তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলে। রামপুরহাটে বিস্ফোরক উদ্ধার কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বুথ এজেন্ট ছিল। এর থেকে প্রমাণ হল অবৈধ বিস্ফোরক কারবারের সঙ্গে বিজেপি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। যদিও বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মণ্ডল বলেন, শাহে আলম বহুদিন ধরেই বিস্ফোরক কারবারের সঙ্গে যুক্ত। সে আমাদের বুথ এজেন্ট ছিল কিনা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে যদি সে অন্যায় করে থাকে তাহলে আইন আইনের পথে চলবে।
বিকির বাড়ি ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া নলহাটি থানার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম হলেও বর্তমানে সে পাশের হরিদাসপুরে বসবাস করে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, একটা সময় আর্থিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল বিকির এখন আঙুল ফুলে কলা গাছ অবস্থা। প্রচুর টাকার মালিক। হরিদাসপুর গ্রামে দু’টি পাকা দোতলা বাড়ি। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় উদয়নগর হাইস্কুলের বুথে বিজেপির এজেন্ট ছিল সে।
গতবছর ১৪ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া নলহাটির চন্দননগর গ্রামের পরিত্যক্ত পাথর ভাঙা কলের অফিসে মজুত থাকা প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। সেইসময় ৪২ হাজার ৮০০টি জিলেটিন স্টিক, ২১হাজার ডিটোনেটর ও ১৪ বস্তা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনায় বিকিকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের অবৈধ কারবারে নামে সে। গত মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া রামপুরহাটের হস্তিকাঁদা জঙ্গলের মধ্যে পরিত্যক্ত গোডাউন থেকে প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করে জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। সেই ঘটনাতেও পুলিস স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর করে। তাতে প্রথম নাম রয়েছে বিকির। এছাড়া হস্তিকাঁদা গ্রামের ডোম ঘোষ, ভোম্বল ঘোষ ও লাগোয়া সেনবাঁধা গ্রামের সুজিত ঘোষ ও প্রশান্ত ঘোষের নাম রয়েছে। পুলিস তাদেরও খোঁজ শুরু করেছে। উদয়নগর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, এনআইএর হাত থেকে বাঁচতেই বিকি বিজেপি দল করে।
জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, অবৈধ বিস্ফোরক কারবারের পাশাপাশি বিকির সঙ্গে এক বৈধ কারবারির যোগ রয়েছে। অবৈধ খাদানগুলিতে সরাসরি বৈধ কারবারিরা বিস্ফোরক সাপ্লাই করতে পারে না। বিকি বৈধ ও অবৈধ খাদানে বিস্ফোরকের জোগান দেয়। -নিজস্ব চিত্র