ঢেঁকি এখন অতীত, পিঠেপুলির জন্য বাজারের রেডিমেড চালের গুঁড়িই ভরসা
বর্তমান | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: কাঠের ঢেঁকি এখন অতীত। পৌষপার্বণ এলেই আগে গ্রাম বাংলায় ঢেঁকির কদর বাড়ত। পিঠেপুলি খাওয়ার জন্য ঢেঁকিছাঁটা চালের প্রয়োজন পড়ত। আর সেই চাল ভাঙতে ঢেঁকির কাছে গ্রামের বধূদের লম্বা লাইন পড়ত। প্রযুক্তির যুগে কাটোয়া মহকুমা জুড়ে ঢেঁকির ট্রাডিশন হারিয়ে যেতে বসেছে। কারও ঢেঁকি মাচায় তোলা, আবার কারও ঢেঁকি উইপোকায় খেয়ে নিচ্ছে। পিঠে খাওয়ার জন্য কাটোয়ায় রেডিমেড প্যাকেট বন্দি চালগুঁড়ি কিনতে দোকানে দোকানে হিড়িক পড়েছে গৃহবধূদের। আগে গ্রামেগঞ্জে পৌষ সংক্রান্তির দিনে পিঠেপার্বণ উৎসবে বাঙালির ঘরে ঘরে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করার শব্দ শুনতে পাওয়া যেত। আর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাঁদের বাড়িতে ঢেঁকি আছে তাঁদের বাড়িতে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতেন বাড়ির মা-ঠাকুমারা। সেই ঢেঁকি ছাঁটা আতপ বা সেদ্ধ চালের সুস্বাদু নানারকম পিঠে তৈরি হতো। নলেন গুড় দিয়ে সেইসব ঢেঁকিছাঁটা চালের পিঠে খেয়ে বাঙলির রসনাতৃপ্ত হতো। সেসব হারিয়ে গিয়েছে। কাটোয়ার সব বাজারেই এখন পিঠে তৈরির জন্য চালের গুঁড়ি কিনতে পাওয়া যায়। মেশিনে সেদ্ধ গুঁড়ি ৫০ টাকা কেজি।
কাটোয়া শহরের গৃহবধূ শেফালি সরকার, বৈশাখী মোদক বলেন, এখন ঢেঁকি আর পাব কোথায়! হাতে সময়ও কম। তাই রেডিমেড চালের গুঁড়ি কিনেই বাড়িতে পিঠে তৈরি করছি। নিয়মরক্ষাটুকু তো করতেই হবে।
কাটোয়ার একাইহাট এলাকায় একসময় অনেক বাড়িতেই ঢেঁকির রমরমা ছিল। সেইসব বাড়িতে গিয়ে পৌষপার্বণে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করার শব্দ শুনতে পাওয়া যেত। এখন সেসব বাড়িতে ঢুঁ মারলে ধুলো পড়া ও উইয়ে খাওয়া ঢেঁকির কঙ্কালসার চেহারা নজরে পড়ে। একাইহাটের গৃহবধূ শেফালি মণ্ডল বলেন, আমরা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা থেকে এসে বাস করছি। একাইহাটে এসে আমরা সেগুন কাঠের ঢেঁকি তৈরি করি। কয়েকবছর আগেও আমার বাড়িতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করার জন্য আশপাশের প্রতিবেশীরা ভিড় করতেন। সারাদিন ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করে পায়ে ব্যথা হয়ে যেত। আর এখন কেউ আসেন না। সবাই মেশিনে গুঁড়ো করান বা বাজার থেকে চাল গুঁড়ি কেনেন। পড়ে থেকে ঢেঁকিটা নষ্ট হতে বসেছে। আরেক গৃহবধূ দুলালী বাগচি বলেন, আমাদের ঢেঁকিটা তুলে রেখেছি। আগে আমার বাড়িতে পৌষ মাস এলেই প্রতিবেশিদের লম্বা লাইন পড়ে যেত। এখন সেই ঢেঁকি উইপোকা নষ্ট করে দিচ্ছে। দাঁইহাট শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চর দাঁইহাট পাড়ায় আবার নতুন করে ঢেঁকি তৈরি করিয়েছেন রমা সরকার। তিনি বলেন, ঢেঁকি ছাঁটা চালের স্বাদই আলাদা তাই শাল কাঠের ঢেঁকি তৈরি করিয়েছি। -নিজস্ব চিত্র