নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: মকর সংক্রান্তিতে বাঙালির একান্ত আপন পিঠেপুলি উৎসবেও এবার বাণিজ্যিক ছোঁয়া। ইঁদুরদৌড়ের যুগে বাড়িতে পিঠে তৈরি অনেকটাই কমে গিয়েছে। তা বলে পিঠের চাহিদা কমেনি। সেজন্য ১০-২৫টাকা পিস দামের পিঠে কিনতে সোমবার শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ক্রেতাদের লম্বা লাইন দেখা গেল। সেখানে শোকেসে সাজানো ভাজা পিঠে, পাটিসাপটা কিনতে দেখা গেল মহিলাদেরও। অনেকেই জানালেন, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে সংসার, সন্তান সামলে পিঠে তৈরির সময় মেলে না। যেটুকু সময় পাওয়া যায়, তার অনেকটাই নিয়ে নেয় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ নানা সোশ্যাল মিডিয়া। অগত্যা মিষ্টির দোকানই ভরসা।
মঙ্গলবার মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান। তার আগে বাড়ির জন্য পিঠে নিয়ে যেতে সমস্ত দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা গিয়েছে। রেলকর্মী বিবেক দাস আপকার গার্ডেনে মিষ্টি কিনতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, একসময় মা বাড়িতে পিঠে তৈরি করতেন। মকর স্নান করে মায়ের হাতের তৈরি ভাজা পিঠে নলেন গুড় দিয়ে খেয়ে মনে হতো অমৃত। সেই দিন এখন নেই। দোকানে ভাজা পিঠে বিক্রি শুরু হয়েছে দেখছি। তাই কিনে নিয়ে যাব।
মিষ্টির দোকানে মায়ের কোলে চেপে পিঠে পছন্দ করছিল ছোট্ট রূপম। সে জানেই না, এই ‘মিষ্টি’ বাড়িতে বানানো যায়। দুধপিঠে খুব পছন্দ তার। রূপমের মা অতশী দে বলেন, ওদের কী দোষ বলুন। আমরাই তো মায়ের কাছে পিঠে তৈরি শিখিনি। মকর সংক্রান্তির আগে থেকেই একসময় বাড়ি বাড়ি পিঠে তৈরির ধুম পড়ে যেত। বিশেষত মকর সংক্রান্তির আগের দিন কেজি কেজি চালের গুঁড়ো দিয়ে পিঠে বানানো হতো। ক্ষিরের পুর, নারকেল পুর, তিলের পুর দিয়ে হরেকরকমের পিঠে তৈরি হতো। তা দুধে ফুটিয়ে দুধ পিঠে তৈরি হতো। কিন্তু এখন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে সংসারে এই ঝক্কি অনেকেই নিতে চান না। তাই বাড়িতে পিঠে তৈরি কমে গিয়েছিল। সেই চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসেন বুদ্ধিমান মিষ্টি বিক্রেতারা। তাঁরা এসময় পিঠে তৈরি করে বাড়তি আয়ের রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন। তাই তো দুর্গাপুরের বেনাচিতির জলখাওয়া গলি হোক, বা সিটি সেন্টারে চণ্ডীদাসের মিষ্টির দোকান, সর্বত্রই মিলছে হরেকরকমের পিঠে। দুর্গাপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ী মলয় সাহা বলেন, প্রতিবছরই কিছু নতুন পিঠে তৈরি করা হয়। এবার আমরা পালং পাটিসাপটা বানিয়েছি। আসানসোলের মিষ্টি ব্যবসায়ী গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এবার দোকানে ভাজা পিঠে, মশলা পিঠে বানানো হয়েছে। -নিজস্ব চিত্র