• ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার, ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে এবার কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি
    বর্তমান | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর: রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অমান্য করেই বাংলার বাড়ির টাকায় থাবা বসিয়েছে ব্যাঙ্ক। উপভোক্তার বাড়ি তৈরির টাকা কোনোওভাবে বকেয়া লোন পরিশোধের টাকা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেনা তারা। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়েছে প্রশাসনিক স্তরে। ব্যাঙ্কের উপর ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকারও। খুব শিগগিরই ব্যাঙ্ক কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে রাজ্য সরকার। গত বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্রভবনে প্রশাসনিক বৈঠকে আসেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। সেখানেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কারণ নদীয়া জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েতে, উপভোক্তাদের লোনের বকেয়া টাকা বাংলার বাড়ির প্রাপ্য টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কের তরফ থেকে। 


    পঞ্চায়েত মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রতিটি ব্যাঙ্ককে বলা আছে, এই টাকা কোনও লোন পরিষদের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, যদি আবার এই অভিযোগ আসে, আমরা সেই ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলব। আমাদের এই নিয়ে নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যাঙ্ক তা লঙ্ঘন করলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি টাকা কোনও ব্যাঙ্ক কাটতে পারবে না।’


    প্রসঙ্গত, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে সারা রাজ্যে প্রায় ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে প্রথম কিস্তি টাকা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে নদীয়া জেলার প্রায় ৪৭ হাজার উপভোক্তা এই টাকা পেয়েছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেক উপভোক্তার ব্যাঙ্ক লোন করা রয়েছে। এবার সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাংলার বাড়ি প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করেছেন তাঁরা। এবার সরকারের তরফ থেকে বাড়ি তৈরির টাকা পাঠানো হয়েছে। অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতেই লোনের বকেয়া টাকা হিসেবে ব্যাঙ্ক তা কেটে নিয়েছে। নদীয়া জেলাতেও এই নিয়ে প্রায় ৬০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ‌


    কালীগঞ্জ ব্লকের মাটিয়ারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা শঙ্করী হাজরা। আবাস যোজনার যোগ্য ঘর প্রাপকের প্রাথমিক তালিকায় তাঁর নাম ছিল। সেইমতো রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তাঁকে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে।‌ কিন্তুআর্থিক দুরবস্থার কারণে বেশ কয়েক মাস আগে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েছিলেন। কিন্তু তা শোধ করতে পারেননি। এই অবস্থায় বাংলার বাড়ির টাকা ঢুকতেই বকেয়া লোন বাবদ সেই টাকা কেটে নেয় ব্যাঙ্ক। যা নিয়ে  কালীগঞ্জ ব্লক প্রশাসনের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ জমা করেছেন। শঙ্করীদেবী বলেন, ‘বাংলার বাড়ির জন্য টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু পূর্ববর্তী লোনের টাকা হিসেবে ব্যাঙ্ক বাড়ি তৈরির টাকা ঢুকতেই তা কেটে নেয়। আমি যাতে ঘর তৈরির জন্য সেই টাকা ব্যবহার করতে পারি, তার ব্যবস্থা করে দিলে উপকৃত হব।’ 


    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলার বাড়ির উপভোক্তাদের সঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের এই সমস্যার বিষয়টি সরাসরি রাজ্যের তরফ থেকে সমাধান করা হবে। নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কী করে ব্যাঙ্ক এই ‘স্বেচ্ছাচারী’ মনোভাব দেখাল, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেইমতো লোন হিসেবে কেটে নেওয়া টাকা দ্রুত উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)