• বাড়ি-ফ্ল্যাটে মেলে না ছাড়পত্র, কার্পেট পেতে মাফিয়াদের ‘স্বাগত’
    বর্তমান | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: প্রশাসনের লাল সুতোর ফাঁস আর ‘গ্রিন করিডরে’র ফারাক ‘হাড়েমজ্জায়’ বুঝে গিয়েছেন শিল্পাঞ্চলের ছাপোষা প্রোমোটার থেকে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করা সাধারণ মানুষ। ভূমিদপ্তর থেকে এডিডিএ, পুরসভা, অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের অফিসে গিয়ে জুতোর সুখতলা ক্ষয়ে যাচ্ছে। সময়মতো বাড়ি, আবাসন তৈরির অনুমতি বের করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু, প্রোমোটিংয়ের মাফিয়াতন্ত্র চালানো বড় ‘হস্তি’দের জন্য প্রশাসনের দপ্তরে সবুজ কার্পেট পাতা। পুকুর, খাল-বিলের পাশাপাশি খাদান ভরিয়েও নির্বিচারে প্রোমোটিং চলছে। সেইসবে লাগাম তো পড়েইনি, উল্টে সেখানে বহুতল নির্মাণের প্রশাসনিক অনুমতি অত্যন্ত দ্রুত মিলছে বলে অভিযোগ। 


    জমির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাওয়ায় ছোট প্রোমোটাররা নতুন প্রজেক্টের জন্য জমি কিনতে গিয়ে হাতে ছ্যাঁকা খাচ্ছেন। তাঁদের প্রজেক্টের সব অনুমোদন পেতে মাসের পর মাস লাগছে। একদিকে সময় যাচ্ছে, অন্যদিকে বিপুল টাকা ফাঁসিয়ে রাখতে হচ্ছে। তারপরও মাফিয়াদের প্রভাবকে টেক্কা দিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রি করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীই পেশা বদল করছেন। প্রোমোটিং ছেড়ে কেউ ছোট রেস্তরাঁ খুলেছেন, কেউ আবার দোকান খুলে নিজের কারবার গুটিয়ে নিয়েছেন। বড় মাছ যেভাবে ছোট মাছদের গিলে খায় শিল্পাঞ্চলের প্রমোটিং কারবারে সেই ‘মাৎস্যন্যায়’ সামনে এসেছে। 


    শিল্পাঞ্চলের জমি কারবারে মাফিয়ারা যুক্ত হওয়ায় আরও একটি শ্রেণি পথে বসার জোগাড় হয়েছে। এতদিন যাঁরা সিমেন্ট ও রডের ব্যবসা করে সংসার চালিয়েছেন, বহু মানুষকে কাজ দিয়েছেন, তাঁদের মাছি তাড়ানোর দশা। ব্যবসায়ীদের দাবি, এলাকায় কোনও আবাসন নির্মাণ হলে স্থানীয় প্রোমোটাররাই সেই কাজ করতেন। তাঁদের কাছে গিয়ে সিমেন্ট, রড সরবরাহ করার বরাত পেতেন। এতে ব্যবসায়ীদের উপকার হতো। এলাকার মানুষজন‌ও কাজ পেতেন। স্থানীয় অর্থনীতিতে ভালো প্রভাব পড়ত। এখন সেইসবের বালাই নেই। 


    জানা গিয়েছে, প্রোমোটিংয়ের ‘বিগ জায়ান্ট’রা এখন সরাসরি সিমেন্ট কারখানা থেকে মাল কিনছেন। রডের ক্ষেত্রেও একই ফর্মুলা। এতে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে না। একই অবস্থা হয়েছে বালি কারবারের ক্ষেত্রেও। বড় ডাম্পারবোঝাই করে মাফিয়াদের সাইটে বালি ফেলে দিচ্ছে বালি কারবারিরা। অল্প বালি পাওয়া দুষ্কর হয়ে গিয়েছে। শিল্পাঞ্চলের এক প্রোমোটার বলেন, এক ট্রলি বালি ৪২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাও বালি পাওয়া যাচ্ছে না। ৪০টাকা বস্তায় এলাকায় বালি বিক্রি হচ্ছে। কীভাবে আমরা কাজ করব বলতে পারবেন? আর এক বাসিন্দা নিতাই সামন্ত বলেন, আত্মীয়ের বাড়ি তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছি। বালিই পাচ্ছি না। শিল্পাঞ্চলের নির্মাণ ব্যবসা কয়েকশো কোটি টাকার কারবারিদের হাতে চলে গিয়েছে। এতে সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষ। পেশা বদল করা শিল্পাঞ্চলের এক প্রোমোটার বলেন, পুরসভায় কোনও প্ল্যান পাশ করাতে গেলে ছোটবেলায় সাপলুডোর খেলার কথা মনে পড়ে। প্ল্যান অনুমোদনের জন্য বহুস্তর রয়েছে। এক একটি স্তর পেরিয়ে সর্বোচ্চ স্তরে গিয়ে কোনও অফিসারের মনে হল ত্রুটি রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ফাইলটি একেবারে নিচের স্তরে আসবে। এই সাপলুডো খেলাটি হয় সাধারণ মানুষদের জন্য। এর ঠিক উল্টো, গ্রিন করিডর করে দ্রুত ফাইল পাশ হতেও আমরা দেখেছি। 


    আসানসোল পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। জমি নিয়ে কোনও অরাজকতা বরদাস্ত করা হচ্ছে না। পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। প্ল্যান পাশ নিয়েও অহেতুক হয়রানি বরদাস্ত করা হবে না। (চলবে)
  • Link to this news (বর্তমান)