সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: ছাউনি দেওয়া বেড়ার ঘরটুকুই মাথাগোঁজার একমাত্র সম্বল ছিল। ‘উমপুন’ সেটাও কেড়ে নেয়। দিশেহারা হয়ে পড়েন বছর ষাটের শান্তি দাস। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে প্রায় এক বছর কখনও স্কুলের বারান্দায়, কখনও অন্যের বাড়িতে থেকেছেন। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে মাথার উপর ছাদ পেতে চলেছেন দাস পরিবার। শান্তিবাবু ও তাঁর স্ত্রী অসুস্থ। ঘর তৈরির সমস্ত কাজ তদারকিতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল কর্মীরা। ইতিমধ্যেই ভিত পুজো হয়ে গিয়েছে। ঘরের টাকা পেয়ে শান্তিবাবু ও তাঁর স্ত্রী বনানীদেবী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মাথা গোঁজার আস্তানা করে দিচ্ছেন, উনিই আমাদের ভগবান।’
নবদ্বীপ মাজদিয়া-পানশিলা পঞ্চায়েতের মাজদিয়া মাঠ পাড়ায় থাকেন বৃদ্ধ শান্তি দাস ও তাঁর পরিবার। এক সময় ভ্যান রিকশ চালিয়ে সংসার চালাতেন শান্তিবাবু। অসুস্থতার কারণে এখন ভিক্ষাবৃত্তিই সম্বল। কোনও দিন পয়সা না জুটলে ঠিকমতো খাবার জোটে না। শান্তিবাবুর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে স্ত্রী বনানী দাস এগারো বছরের মেয়ে সোনালী এবং ন’বছরের ছেলে শান্তনুকে নিয়ে থাকেন।
বনানীদেবী বলেন, ‘আমার স্বামী খুবই অসুস্থ। ভালোভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। আমি নিজেও একজন হার্টের রোগী। পঞ্চায়েত সদস্য সব সময় আমাদের পাশে থাকেন। পঞ্চায়েত সমিতি থেকেও আমরা সাহায্য পাই। সেই সহযোগিতা আর রেশনের চাল পেয়ে কোনওরকম বেঁচে রয়েছি।’ শান্তিবাবুর কথায়, ‘২০-২৫ বছর আগে আমি ভ্যান রিকশ চালাতাম। রোজগারের টাকা জমিয়েআর পোষ্য ছাগল বিক্রি করে মাত্র ৬ হাজার টাকায এই আড়াই কাঠা জমি কিনেছিলাম। সেই জায়গায় কষ্ট করে একটা বেড়ার ঘরও তৈরি করেছিলাম। উমপুনের ঝড়ে সেটাও ভেঙে গিয়েছে।’
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য চৈতন্য দাস বলেন, ‘মাজদিয়ার মাঠপাড়ায় পরিবার নিয়ে থাকেন শান্তিবাবু। আমরা যখন যেমন পারি তখনই ওই পরিবারটিকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। বাংলা বাড়ি প্রকল্পে ঘর মেলায় আমরা খুবই খুশি। উনি যাতে ভালোভাবে ঘর তৈরি করতে পারেন, সে জন্য আমাদের দলীয় কর্মীরাও সব রকমভাবে সাহায্য করছেন।’ নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তপন মণ্ডল বলেন, ‘শান্তিবাবুকে মুখ্যমন্ত্রীর খাদ্য সাথী প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে, উনি নিয়মিত খাদ্য সামগ্রী পাচ্ছেন।’ নবদ্বীপের বিডিও মনীষ নন্দী বলেন, ‘উনি একজন যোগ্য উপভোক্ত হিসেবে ঘর পেয়েছেন। খুবই ভালো কথা। আমরা আশা করব বাড়িটি যথাসময়ে শেষ করবেন এবং সেখানেই বসবাস করবেন।’ -নিজস্ব চিত্র