নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: কোথাও সধবা পাচ্ছে বিধবা ভাতা, কেউ প্রতিবন্ধী না হয়েও পাচ্ছে ‘মানবিক’ ভাতা! একটি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে এরকম ভূরি ভূরি ‘অনিয়ম’ খুঁজে পেলেন শান্তিপুরের বিডিও। প্রশাসনের দাবি, অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে ভুয়ো শংসাপত্র। সধবাকে বানিয়েছে বিধবা, আর কর্ম সক্ষম মানুষকে কাগজে-কলমে বানিয়েছে ‘প্রতিবন্ধী’। যা চিন্তা বাড়িয়েছে প্রশাসনের। এই জাল নথির কারবারিরা যে জঙ্গি সংগঠনগুলিকেও ভারতীয় পরিচয় বা প্রয়োজনীয় জাল নথি দেয়নি তা কে বলতে পারে।
অনুপ্রবেশের বাড়বাড়ন্তর মাঝে সীমান্ত লাগোয়া এলাকাগুলিতে চলছে মানব পাচার। টাকার বিনিময়ে শুধু বেআইনি পথে এই দেশে নিয়ে আসাই নয়, হাতে ভুয়ো পরিচয়পত্রও মিলে যাচ্ছে। একাধিক পুলিসি অভিযানে এরকম উদাহরণ মিলেছে। এরই মাঝে আবার সম্প্রতি শান্তিপুরে এক সধবা মহিলা বিধবা ভাতা পাচ্ছেন বলে তথ্য প্রকাশ্যে আসে। যেখানে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা মাত্র ৩ হাজার টাকা নিয়েই ওই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ। সেই অনিয়ম নিয়ে খোঁজ করতে গিয়েই চোখ কপালে উঠেছে শান্তিপুর ব্লক প্রশাসনের। কারণ এক নয়, বহু এমন উদাহরণ রয়েছে যেখানে ভুয়ো কাগজপত্রের সাহায্যে অযোগ্য মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের ভাতা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, শান্তিপুর ব্লকে সমস্ত প্রকল্পে মোট ৩২ হাজার ভাতা প্রাপক রয়েছে। নতুন করে সেই সমস্ত সুবিধা প্রাপকদের ‘প্রোফাইল’ ঘেঁটে দেখার কাজ করতে গিয়ে মিলেছে অনিয়মের হদিশ। এক, দুই, তিন নয়, ইতিমধ্যে এরকম ৮০জন ভাতা প্রাপকের হদিশ মিলেছে, যেখানে সমস্যা রয়েছে। বিশেষ সূত্রের খবর, রামের ভাতা শ্যাম পাচ্ছেন, বিধবা না হয়েও বিধবা ভাতা পাচ্ছেন, প্রতিবন্ধী না হয়েও মিলছে সমাজ কল্যাণ দপ্তরের মানবিক ভাতা। আবার ৬০ বছর হওয়ার আগেই কারও ব্যাঙ্কে ঢুকছে বার্ধক্য ভাতা। আর কমবেশি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভুয়ো শংসাপত্র জোগাড় করে ভাতার টাকা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, জাল আধার ব্যবহার হয়েছে এমন উদাহরণও মিলেছে! আর এই বিস্তর অনিয়ম হয়েছে করোনা-কালে। কারণ সরকারের তরফে তখন ‘থার্ড পার্টি’র সাহায্যে প্রকল্পগুলির ডেটা এন্ট্রির কাজ করানো হয়েছিল। টাকার বিনিময়ে তখন এই ভুয়ো শংসাপত্র বা পরিচয়পত্র জোগাড় করে দিতে সক্রিয় হয় বিশেষ একটি চক্র। তাদের বদান্যতাতেই গণ্ডগোলের ঘটনার ঘনঘটা। কারণ শান্তিপুর ব্লকেই নাকি প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপক সাত হাজার! স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসনের কাছে এই সংখ্যা সন্দেহের।
শান্তিপুর বিডিও সন্দীপ ঘোষ বলেন, আমরা সত্যিই এরকম একাধিক গণ্ডগোল খুঁজে পেয়েছি। যেখানে যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও ভাতা পাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রায় সবকটি আবেদন হয়েছিল করোনা-কালে। আমরা ৩২ হাজার ভাতার মধ্যেই এই গণ্ডগোল খোঁজার চেষ্টা করছি। প্রশ্ন উঠছে যদি সামান্য ভাতার জন্যই জাল কাগজ এত সহজে জোগাড় হয়ে যায় তাহলে জঙ্গিদের কাছে এই পদ্ধতিতে জাল পরিচয় জোগাড় করে ফেলা তো খুবই সহজ। এ বিষয়ে রানাঘাটের এসডিও ভরত সিং বলেন, এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে বিষয়টা অবশ্যই চিন্তার। আমি নজর রাখব। কারণ বিষয়টির সঙ্গে জাতীয় সুরক্ষা জড়িয়ে রয়েছে।